Page- 7
সহীহ বুখারীতে ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে সালাত রত ছিলাম। তখন আমরা বললামঃ
((اَلسَّلَامُ عَلَى اللَّهِ مِنْ عِبَادِهِ، السَّلَامُ علٰى فُلَانٍ وَّفُلَانٍ))
“আল্লাহর উপর তাঁর বান্দাহদের পক্ষ থেকে শান্তি হোক, অমুক অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ
((لَا تَقُلُوا: السَّلَامُ عَلَى اللَّهِ، فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّلَامُ)) (صحيح البخاري، الأذان، باب التشهد في الاُخْرة، ۸۳۱، ۸۳۵، ۱۲۰۲، ٠۶۲۳ وصحيح مسلم، الصلاة، باب التشهد في الصاوة، ح:۴۰۲)
“আল্লাহর উপর শান্তি হোক, এমন কথা তোমরা বলো না। ১ কেননা আল্লাহ নিজেই ‘সালাম’ শান্তি।” [বুখারী]
* ‘আল্লাহর উপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এ জাতীয় কথা বললে তাওহীদে ঘাটতি দেখা দেবে, কেননা আল্লাহ কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ এক মহান সত্ত্বা কিন্তু সকল বান্দাই তাঁর মুখাপেক্ষী। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
يَا أَيُّهَا ٱلنَّاسُ أَنۡتُمۡ ٱلۡفُقَرَاء إِلَي ٱللَّهِ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلۡحَمِيدُ ١٥ فَاطِر
অর্থঃ “হে লোক সকল! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ, তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।” (সূরা ফাতিরঃ ১৫)
১ সাহাবায়ে কেরাম উক্ত ভাবে আল্লাহর শানে সালাম অভিবাদন হিসেবে বলে ছিলেন। আর সালাম এ শরীয়তে পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অতএব বান্দার পক্ষে থেকে আল্লাহর প্রতি সালাম প্রদানের অর্থ হলো, তাঁরা যেন বলেছেনঃ আল্লাহর প্রতি বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম বর্ষিত হোক, কথাটি আল্লাহর ক্ষেত্রে তাঁর সান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে প্রযোয্য নয়। কারণ তিনিই সালাম বা শান্তি। তিনিই সকলকে শান্তি দান করেন। এমন কে আছে যে তাঁকে শান্তি প্রদান করবে? কেননা এখানে আল্লাহর প্রতি সালামের অর্থ দাঁড়ায়ঃ আল্লাহর প্রতি তাঁর বান্দাদের পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক, আর একথা নিঃসন্দেহে বাতিল-ভ্রান্ত ও আল্লাহর সাথে বেআদবী ও জঘন্য আচরণ এবং তাওহীদের পরিপন্থী। এজন্যই নবী (সাঃ) এ ধরনের বাক্য প্রয়োগ করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং এই নিষেধ হারাম সূচক।
০১। ‘সালাম’ এর ব্যাখ্যা।
০২। ‘সালাম’ হচ্ছে সম্ভাষণ।
০৩। এ [‘সালাম’] সম্ভাষণ আল্লাহর ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।
০৪। আল্লাহর ব্যাপারে ‘সালাম’ প্রযোজ্য না হওয়ার কারণ।
০৫। বান্দাহগণকে এমন সম্ভাষণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা আল্লাহর জন্য সমীচিন ও শোভনীয় নয়।
সহীহ হদীসে আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((لَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ، اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ، لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا مُكْرِهَ لَهُ)) (صحيح البخاري، الدعوات، باب ليعزم المَسَألَةَ فإنه لا مكره له، ح:۶۳۳٩، ۷۴۶۴ وصحيح مسلم، الذكر والدعاء والتوبة والاستغفار، ح:۲۶۷٩)
“তোমাদের মধ্যে কেউ যেন একথা না বলে, ‘হে আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে মাফ করে দাও, ‘হে আল্লাহ, ‘তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে করুণা করো।’ বরং দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। কেননা আল্লাহর উপর জবরদস্তি করার মতো কেউ নেই।” ১ (বুখারী)
সহীহ মুসলিম-এ বর্ণিত আছেঃ
((وَلْيُعْظِمِ الرَّغْبَةَ، فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَتَعَاظَمُهُ شَيْءٌ أَعْطَاهُ)) (صحيح مسلم، الذكر والدعاء والتوبة والاستغفار، ح:۲۶۷٩)
“আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার উৎসাহ উদ্দীপনাকে বৃদ্ধি করা উচিত। কেননা আল্লাহ বান্দাহকে যা-ই দান করেন না কেন তার কোনোটাই তাঁর কাছে বড় কিংবা অসম্ভব নয়।” ২ [মুসলিম]
* ‘হে আল্লাহ তুমি চাইলে আমাকে মাফ কর’ এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, উক্ত প্রকার বাক্য প্রয়োগকারীর আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা পাবার তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই এবং তার মধ্যে বিনীত কোন ভাবও নেই। এটা অহংকারীদের এবং বিমুখতা অবলম্বনকারীদের কাজ। বান্দা তার রবের কাছে মনযোগ ও দৃঢ়তার সাথে প্রার্থনা করবে এবং সে অত্যান্ত বিনীতভাবে তার প্রয়োজন ও ক্ষুধার্তভাব প্রকাশ করবে এবং তাঁর অনুগ্রহ, অনুকম্পা ও ক্ষমার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী হবে।
১ দৃঢ় প্রত্যয়ই মুখাপেক্ষী ও বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে চাইবে, অহংকারী ও মুখাপেক্ষীহীনের মত নয়। নবী (সাঃ) এর বাণীঃ فإن اللَّه لا مكره له অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ মুখাপেক্ষীহীনতা, পরিপূর্ণ মর্যাদাবান ও পরাক্রমশীল হওয়ার জন্য এমন কেউ নেই যে, তাঁকে কেউ বাধ্য করবে। আর এ হল, তাঁর নাম ও গুণাবলীর প্রভাবের অন্তর্ভূক্ত।
২ নবী (সাঃ) এর বাণী “ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ করবে।” (রোগীরদের সামনে) মূলতঃ দু‘আ নয়। বরং এটা খবর দেয়ার প্রসঙ্গে অর্থাৎ ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ হবে। সুতরাং পূর্বের বিধান থেকে এটি আলাদা হওয়ার সুস্পষ্ট।
০১। দু‘আয় কোন শর্ত করা নিষিদ্ধ।
০২। কোন শর্ত করা নিষিদ্ধ তার কারণ বর্ণনা করা।
০৩। প্রার্থনা করার বিষয়ে সংকল্প রাখা।
০৪। প্রার্থনা করার সময় উৎসাহ থাকা।
০৫। দু‘আয় উৎসাহ দেখানোর কারণ।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((لَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ: أَطْعِمْ رَبَّكَ، وَضِّىء رَبَّكَ وَلْيَقُلْ: سَيِّدِي وَمَوْلَايَ وَلَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ: عَبْدِي وَأَمَتِي، وَلْيَقُلْ: فَتَايَ وَفَتَاتِي وَغُلَامِي)) (صحيح البخاري، العتق، باب كراهية التطاول على الرقيق، ح:٢٥٥٢ وصحيح مسلم، الألفاظ من الأدب وغيرها، باب حكم إطلاق لفظة العبد والأمة والمولى والسيد، ح:۲۲۴٩)
“তোমাদের কেউ যেন না বলে, তোমার রবকে খানা খাওয়াও, ‘তোমার রবকে অযূ করাও।’ ১ বরং সে যেন বলে, ‘আমার নেতা, আমার মনিব।’ তোমাদের কেউ যেন না বলে, ‘আমার দাস, আমার দাসী। বরং সে যেন বলে, ‘আমার ছেলে, আমার মেয়ে আমার চাকর।”
* ‘আমার দাস-দাসী’ বলা যাবে না। কেননা দাসত্ব তো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। যদি কেউ বলে এটা আমার দাস বা দাসী তখন সে দাসত্বের সম্পর্ক নিজের দিকে করল যা আল্লাহর সাথে আদবের সম্পূর্ণ বরখেলাপ এবং আল্লাহর রুবুবিয়াতের বড়ত্বের পরিপন্থী, আর মাখলুকের উবূদিয়াত-দাসত্ব যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য তার বিনাশ সাধন করে। এজন্য অধিকাংশ উলামার নিকট এ শব্দ প্রয়োগ করা নাজায়েয তবে কতিপয় তা মাকরূহ বলেছেন।
১ রব না বলা প্রসঙ্গে ‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন যে এ নিষেধাজ্ঞা কি ধারনের কেউ বলেছেন এটা হারাম আবার কেউ বলেছেন এটা মাকরূহ কেননা এটা শুধু আদবের কারণে নিষেধ করা হয়েছে; কিন্তু নির্ভরযোগ্য কথা হচ্ছে যে এটা হারাম। কিন্তু রব এর সম্বোধন এমন বস্তুর দিকে করা যার উপর শরীয়তের বিধি-নিষেধ নেই। যেমনঃ رب الدار অর্থাৎ গৃহের রব বা মালিক সাইয়্যেদ যদিও আল্লাহ নিজেই কিন্তু সম্বোধনের সাথে অর্থাৎ আমার সাইয়্যেদ ইত্যাদিভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে। উবুদিয়াত-দাসত্বের ধারণা আসা অসম্ভব কিন্তু আনুপাতিক হারে বান্দার জন্য ও সিয়াদত বা নেতৃত্ব মানা যায়। পক্ষান্তরে সমগ্র মাখলুকের উপর আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব প্রমাণিত।
হে আমার মাওলা শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে তবে সাইয়্যেদ ও মাওলা শব্দ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবাহার করা জায়েয, কেননা এখানে আনুপাতিক হারে অর্থ দাঁড়াবে। অর্থাৎ মাখলুকের জন্য এর ব্যবহার নিতান্তই সীমিত ও তার অবস্থান ও মর্যাদা সাপেক্ষে অনুরূপ আল্লাহর জন্য এর অর্থ হবে তাঁর মহত্ব, অসীমত্ব ও মর্যাদা সাপেক্ষে।
০১। আমার দাস-দাসী বলা নিষিদ্ধ।
০২। কোন গোলাম যেন তার মনিবকে না বলে, ‘আমার রব।’ এ কথাও যেন না বলে, ‘তোমার রবকে আহার করাও।’
০৩। প্রথম শিক্ষণীয় বিষয় হলো, “আমার ছেলে”, ‘আমার মেয়ে’, ‘আমার চাকর’ বলতে হবে।
০৪। দ্বিতীয় শিক্ষণীয় বিষয় হলো, ‘আমার নেতা’, ‘আমার মনিব’, বলতে হবে।
০৫। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন। আর তা হচ্ছে শব্দ ব্যবাহার ও প্রয়োগের মধ্যেও তাওহীদের শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((مَنْ سَأَلَ بِاللَّهِ فَأَعْطُوهُ، وَمَنِ اسْتَعَاذَ بِاللَّهِ فَأَعِيذُوهُ، وَمَنْ دَعَاكُمْ فَأَجِيبُوهُ، وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَّعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَّمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ فَدْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ)) (سنن أبي داود، الزكاة، باب عطية من سأل باللَّه، ح:۱۶۷۲ وسنن النسائي، الزكاة، باب من سأل باللَّه عزوجل، ح:۲۵۶۸)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে আশ্রয় দাও, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে চায় তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না ১ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে ডাকে, তার ডাকে সাড়া দাও। যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভাল কাজ করে, তার ডাকে সাড়া দাও। যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভাল কাজ করে, তার যথোপযুক্ত প্রতিদান দাও। তার প্রতিদানের জন্য যদি তোমরা কিছুই না পাও, তাহলে তার জন্য এমন দু‘আ করো, যার ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছো।” [আবু দাউদ, নাসায়ী]
* আল্লাহর ওয়াস্তে প্রার্থনা করা হলে আল্লাহর প্রতি সম্মান রক্ষার্থে প্রার্থনাকারীকে বিমুখ করা বৈধ হবে না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) সহ অনেক ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন যখন আল্লাহর ওয়াস্তে নির্দিষ্ট কারো নিকট কিছু চাইবে আর সে তা প্রদান করতে সমর্থ রাখে তখন বিমুখ করা হারাম হবে। আর যখন আল্লাহর ওয়াস্তে অনির্দিষ্ট কারো নিকট কিছু চাইবে তখন তাকে দেয়া উত্তম হবে এবং যদি জানা যায় যে উক্ত প্রার্থনাকারী মিথ্যাবাদী কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে চায় তবে তাকে দেয়া জায়েয।
১ আল্লাহর ওয়াস্তে চাওয়া সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উসীলা। কেউ ডাকলে সাড়া দিতে হবে এটা বিশেষ করে ওলীমার দাওয়াতের ক্ষেত্রে। প্রতিটি দাওয়াতে নয়। তবে সকল দাওয়াতে আংশগ্রহণ করতে পারলে তা উত্তম হবে। উল্লেখিত হাদীসে এ শিক্ষাও বিদ্যমান যে, কেউ যদি কারো প্রতি সদ্ব্যবহার করে তবে তার প্রতিদানে আপারগতা প্রকাশ না করে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তারপরেও যদি প্রতিদান দয়া সম্ভব না হয় তবে তার জন্য কমপক্ষে এমন দোয়া করবে যাতে বুঝা যায় যে, সে তার প্রতিদান দিল। অবশ্য এ স্থান অর্জন করতে একমাত্র প্রকৃত পরহেযগার ও তাওহীদপন্থী ব্যক্তিরাই পারবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
০১। আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় প্রার্থনাকারীদেরকে আশ্রয় দান।
০২। আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য প্রার্থনাকারীকে সাহায্য প্রদান।
০৩। নেক কাজের আহ্বানে সাড়া দেয়া।
০৪। ভাল কাজের প্রতিদান দেয়া।
০৫। ভাল কাজের প্রতিদানে অক্ষম হলে উপকার সাধনকারীর জন্য দু‘আ করা।
জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((لَا يُسْأَلُ بِوَجْهِ اللَّهِ إِلَّا الْجَنَّةُ)) (سنن أبي داود، الزكاة، باب كراهية المسألة بوجه اللَّه عزوجل، ح:۱۶۷۱)
অর্থঃ “বিওয়াজহিল্লাহ্ [আল্লাহর চেহারার উসীলা] দ্বারা একমাত্র জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই চাইবে না।” [আবু দাউদ]
* আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ পূর্বক আল্লাহর চেহারার উসীলায় জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া বৈধ হবে না।
১ চেহারা আল্লাহর সত্ত্বাগত গুণাবলীর একটি। যা তাঁর উপযোগী পর্যায়েই সাব্যস্ত ও প্রমাণিত কিন্তু তার কাইফিয়াত বা রকম সম্পর্কে শুধু আল্লাহই জানেন তবে তার প্রতি আমরা বিশ্বাস করবো কোন প্রকার উদাহরণ ছাড়াই এবং তা অকেজো ধারণা না করা। কেননা আল্লাহ বলেনঃ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَىۡءٞ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ তাঁর সাদৃশ কেউ নেই এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
আল্লাহর নামে বা তাঁর গুণাবলী দ্বারা সামান্যতম ও নিকৃষ্টতম কোন জিনিস চাওয়া বৈধ হবে না। বরং বড় বড় বিষয় যেমন জান্নাহ চাওয়া সমীচীন হবে। এ অধ্যায়ে যেন আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণাবলীর মহত্বের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
০১। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ জান্নাত ব্যতীত “বিওয়াজহিল্লাহ” দ্বারা কিছু চাওয়া যায় না।
০২।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
يَقُولُونَ لَوۡ كَانَ لَنَا مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَىءٞ مَّاقُتِلۡنَا هَٰهُنَاۗ … ١٥٤ آلِ عِمۡرَانَ
অর্থঃ “তারা বলছিল আমাদের হাতে ‘যদি’ কিছু করার থাকত তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না।” ১ (সূরা আ’লে ইমরানঃ ১৫৪)
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ
ٱلَّذِينَ قَالُوا لِإِخۡوَٰنِهِمْ وَقَعَدُواْ لَوۡ أَطَاعُونَا مَاقُتِلُواْۗ … ١٦٨ آلِ عِمۡرَانَ
অর্থঃ “ওরা হলো সেসব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাই সম্বন্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শুনত তবে নিহত হতো না।” (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬৮)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((إِحْرِصْ عَلَىٰ مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللَهِ، وَلَا تَعْجِزْ، وَإِنْ أَصَابَاكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ: لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ لَكَانَ كَاذَا، وَلَٰكِنْ قُلْ: قَدَّرَ اللَّهِ وَمَا شَآءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ)) (صحيح مسلم، باب الإيمان بالقدر وَالإذعان له ح:۲۶۶۴ ومسند احمد:۳۶۶/۲، ۳۷۰)
“যে জিনিস তোমর উপকার সাধন করবে, তার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, আর কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তুমি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ো, তবে এ কথা বলো না, ‘যদি আমি এরকম করতাম, তাহলে অবশ্যই এমন হতো’ তুমি এ কথা বলো, ‘আল্লাহ যা তাকদীরে রেখেছেন এবং ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে। কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়।” (বুখারী)
* গ্রন্থকার (রহঃ) এই অধ্যায় রচনা করেছেন কেননা অনেকেই তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তাকদীরের উপর আক্ষেপ করে বলে যে আফসোস যদি এমন করতাম তবে এমন হতো না। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই তো সমস্ত কৃতকর্ম ও তার ফলাফল নির্ধারক। অতএব, সবকিছু তাঁরই ফয়সালাতে ঘটে থাকে।
১ তারা (মুনাফিকগণ) বলে যদি এ ব্যাপারে আমাদের কোন কথা রাখা হতো তবে আমরা এখানে নিহত হতাম না। ‘যদি’ শব্দটি যখন অতীতের জন্য ব্যবহার করা হবে তখন তা না জায়েয ও হারাম হবে কেননা তা প্রমাণ করে যে ‘যদি’ শব্দটি বাক্যে প্রয়োগ করা হলো মুনাফিকের আলামত, তাই ব্যবহার করা হারাম। ‘যদি’ -এর ব্যবহার অন্তরকে দুর্বল ও অপারগ করে দেয়; কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ‘যদি’ -এর ব্যবহার আল্লাহর রহমত ও কল্যাণের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হলে তখন তা বৈধ হবে। কিন্তু যদি ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেই অহংকার ও বড়ত্ব প্রকাশ করতেঃ হয় তবেও নাজায়েয। কেননা এতে তকদীরের প্রতি স্বীয় নিয়ন্ত্রণ প্রকাশ পায়।
১। সূরা আল-ইমরানের ১৫৪নং আয়াত এবং ১৬৮নং আয়াতের উল্লেখিত অংশের তাফসীর।
২। কোন বিপদাপদ হলে ‘যদি’ প্রয়োগ করে কথা বলার উপর সুষ্টষ্প নিষেধাজ্ঞা।
৩। শয়তানের [কুমন্ত্রণামূলক] কাজের সুযোগ তৈরিকরণ।
৪। উত্তম কথার প্রতি দিক নির্দেশনা।
৫। উপকারী ও কল্যাণজনক বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা।
৬। এর বিপরীত অর্থাৎ ভাল কাজে অপারগতা ও অক্ষমতা প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা।
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তোমরা যদি বাতাসের মধ্যে তোমাদের অপছন্দনীয় কিছু প্রত্যক্ষ করো তখন তোমরা বলোঃ
((اَللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَٰذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَ خَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هّٰذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ))(جامع الترمذي، الفتن، باب ما جاء في النهي عن سب الرياح، ح:۲۲۵۲)
“হে আল্লাহ্ এ বাতাসের মধ্যে যা কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল আছে এবং যতোটুকু কল্যাণ করার জন্য সে আদিষ্ট হয়েছে ততোটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থণা করি। আর এ বাতাসের মধ্যে যা অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুকায়িত আছে এবং যতোটুকু অনিষ্ট সাধনের ব্যাপারে সে আদিষ্ট হয়েছে তা [অমঙ্গল ও অনিষ্টতা] থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।” ১ [তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
* বাতাসকে গালি দেয়া ‘যুগকে গালি দেয়ার মত।’ বাতাসকে গালি দেয়া হারাম। কেননা যেভাবে ইচ্ছা বাতাস নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন স্বয়ং আল্লাহ্, তাই বাতাসকে গালি দাতার গালি প্রকৃতপক্ষে বাতাসের নিয়ন্ত্রকের উপরই বর্তায়। তাই বাতাসকে গালি দেয়া হারাম। তবে তার ধ্বংস যজ্ঞ ও প্রবাহের গতি এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
১ لا تسبوا الريح এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, বাতাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহরই এবং তাঁরই আদেশের অধীন এ জন্য নবী (সাঃ) অপছন্দমূলক বাতাস প্রবাহের প্রক্বালে হাদীসে বর্ণিত দুয়া পড়ার নির্দেশ দেন।
১। বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ।
২। মানুষ যখন কোনো অপছন্দনীয় জিনিষ দেখবে তখন কল্যাণকর কথা বলবে, তার নির্দেশনা।
৩। বাতাস আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট, এ কথার দিক নির্দেশনা।
৪। বাতাস কখনো কল্যাণ সাধনের জন্য আবার কখনো অকল্যাণ করার জন্য আদিষ্ট হয়।
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَظُنُّونَ بِٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ ظَنَّ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِۖ يَقُولُونَ هَل لَّنَامِنَ ٱلۡأَمۡرِ مِن شَيۡءٖۗ قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِۗ … ١٥٤ آلِ عِمۡرَانَ
“তারা জাহেলি যুগের ধারণার মতো আল্লাহ সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা পোষণ করে। তারা বলে, ‘আমাদের জন্য কি কিছু করণীয় আছে?’; [হে রসূল] আপনি বলে দিন, সব বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত।” ১ (সূরা আল-ইমরান- ১৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেনঃ
الظَّآنِّينَ بِٱللَّهِ ظَنَّ السَّوۡءِۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۖ ٦ ٱلۡفَتۡح
“তারা [মুনাফিকরা] আল্লাহ সম্পর্কে খারপ ধারণা পোষণ করে, ১ তারা নিজেরাই খারাপ ও মন্দ দোষের আবর্তে নিপতিত।” [আলা-ফাতাহ: ৬]
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) বলেছেন, ظن এর ব্যাখ্যা হল, মুনাফিকদের ধারণা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেন না। তাঁর বিষয়টি অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে যে, নবী (সাঃ) এর উপর যে সব বিপদাপদ এসেছে, তা আদৌ আল্লাহ্র ফায়সালা, তাকদীর এবং হিকমাত মোতাবেক হয়নি।
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুনাফিকরা আল্লাহর হিকমত, তাকদীর, রাসূল (সাঃ) -এর পূর্ণাঙ্গ রিসালত এবং সকল দ্বীনের উপর আল্লাহ্র দ্বীন তথা ইসলামের বিজয়কে অস্বীকার করেছে। আর এটাই হচ্ছে সেই খারাপ ধারণা যা ‘সূরা ফাত্হ’ -এ উল্লেখিত মুনাফিক ও মুশরিকরা পোষণ করত। এ জাতীয় বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণ এই যে, আল্লাহ্ পাকের সুমহান মর্যাদার জন্য এটা শোভনীয় ছিল না। তাঁর হিকমতের প্রশংসা এবং সত্য ওয়াদার জন্যও উক্ত ধারণা ছিল বেমানান, অসৌজন্যমূলক।
যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তা‘আলা বাতিলকে হক্বের উপর এতটুকু বিজয় দান করেন, যাতে হক্ব অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, অথবা যে ব্যক্তি আল্লাহর ফায়সালা, তাকদীরের নিয়মকে অস্বীকার করে, অথবা তাকদীর যে আল্লাহর এক মহা কৌশল এবং প্রশংসার দাবীদার এ কথা অস্বীকার করে, সাথে সাথে এ দাবীও করে যে, এসব আল্লাহ তা’আলার নিছক অর্থহীন ইচ্ছামাত্র; তার এ ধারণা কাফিদের ধারণার সমতুল্য বৈ কিছু নয়। তাই জাহান্নামের কঠিন শাস্তি এ সব কাফিরদের জন্যই অবধারিত রয়েছে। অধিকাংশ লোকই নিজেদের (সাথে সংশ্লিষ্ট) বিষয়ে এবং অন্যান্য লোকদের বেলায় আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আসমা ও সিফাত (নাম ও গুণাবলী) এবং তাঁর হিকমত ও প্রশংসা সম্পর্কে অবগত রয়েছে, কেবলমাত্র সেই আল্লাহর প্রতি এ জাতীয় খারাপ ধারণা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। ২
যে ব্যক্তি প্রজ্ঞা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান এবং নিজের জন্য কল্যাণকামী, তার উচিত এ আলোচনা দ্বারা বিষয়টির অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বীয় রব সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তার উচিত নিজ ভ্রান্ত ধারণার জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা।
আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণকারী কোন ব্যক্তিকে যদি তুমি পরীক্ষা কর, তাহলে দেখতে পাবে তার মধ্যে রয়েছে তাকদীরের প্রতি হিংসাত্মক বিরোধিতা এবং দোষারোপ করার মানসিকতা। তারা বলে, বিষয়টি এমন হওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারে কেউ বেশি, কেউ কম বলে থাকে। তুমি তোমার নিজেকে পরীক্ষা করে দেখ, তুমি কি খারাপ ধারণা মুক্ত? কবির ভাষায়ঃ
মুক্ত যদি থাক তুমি এ খারাবি থেকে,
বেঁচে গেলে তুমি এ মহাবিপদ থেকে,
আর যদি নাহি পার ত্যাগিতে এ রীতি,
বাঁচার তরে তোমার লাগি নাইকো কোন গতি॥
* আল্লাহর রুবূবিয়্যাত ও তাঁর নাম ও গুণাবলীর পূর্ণতার চাহিদা হচ্ছে, তিনি উচ্চতর হিকমত সম্মত কারণ ছাড়া কোন কার্য সম্পাদন করেন না। আর হিকমত হল, উত্তম উদ্দেশ্য সাপেক্ষ কার্যবলীকে তার যথাস্থানে রাখা। ফলে তাঁর কামালিয়াতের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর ব্যাপারে হক কথা বলা ও সঠিক ধারণা পোষণ করা ওয়াজিব। অনুরূপ তাঁর পরিপূর্ণ হিকমাত, রহমত, ও ইনসাফের দাবী হল জাহেলী যুগের লোকদের ন্যায় তার ব্যাপারে কোনরূপ খারাপ ও অসম্পূর্ণতার ধারণা না করা যা তাওহীদের মূলনীতির পরিপন্থী বা তাওহীদের পরিপূর্ণতার পরিপন্থী। তারা ধারণা করত যে, আল্লাহর কার্যসমূহ হকের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, ফলে তারা শিরকে জড়িয়ে পড়ত। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা বলে আমাদের কি কোন কথা রাখা হবে? অথচ তাদের এ কথায় হিকমাত এবং তাকদীরকে অস্বীকার করা হচ্ছে।
১ তারা (মুনাফিকরা) আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তারা নিজেরাই খারাপ ও দোষের আবর্তে নিপতিত’। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, সালফে সালেহীন এই খারাপ ধারণা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন যে, জাহেলী যুগের লোকেরা তিন রকম ধারণা করতঃ প্রথমটি তাকদীর তথা ভাগ্যকে অস্বীকার করত, দ্বিতীয়টি প্রতিটি কাজেই আল্লাহর হিকমত নিহিত আছে তা অস্বীকার করত, তৃতীয়টি আল্লাহ যে তাঁর রাসূলকে তাঁর দ্বীনকে এবং তাঁর নেক বান্দাদেরকে সাহায্য করেন তা অস্বীকার করত।
২ আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা থেকে শুধুমাত্র তারাই পরিত্রাণ পায় যারা আল্লাহ ও তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে এবং হিকমত ও হাম্দ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে। যারা আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করে তারা তাদের আল্লাহ্র নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত, অনেককে দেখা যায় বাহ্যিকভাবে তারা আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা করা থেকে মুক্ত, কিন্তু মনের দিক থেকে তারা পরিস্কার হতে পারেনি। ফলে তাদের আল্লাহর নাম সমূহ ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা জরুরী। এমনকি সে যদি বড় ধরণের বিপদেও আক্রান্ত হয় তবুও ধারণা করতে হবে যে আল্লাহ্ হক এবং তাঁর সমস্ত কার্যাবলী হক্ব।
০১। সূরা আল-ইমরানের ১৫৪ নং আয়াতের তাফসীর।
০২। সূরা ফাত্হ-এর ৬নং আয়াতের তাফসীর।
০৩। আলোচিত বিষয়ের প্রকার সীমাবদ্ধ নয়।
০৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর আসমা ও সিফাত (নাম ও গুণাবলী) এবং নিজের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত রয়েছে, কেবলমাত্র সেই আল্লাহর প্রতি কুধারণা পোষণ করা থেকে বাঁচতে পারে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেছেনঃ “কসম সেই সত্ত্বার, যার হাতে ইবনে ওমরের জীবন, তাদের (তাকদীর অস্বীকারকারীদের) কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনে। ১ অতঃপর তিনি রাসূল (সাঃ) -এর বাণী দ্বারা তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল পেশ করেনঃ
((الْإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَلْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ)) (صحيح مسلم، الإيمان، باب بيان الإيمان والإسلام والإحسان، ح:٨)
অর্থঃ “ঈমান বলতে বুঝায় এই যে, তুমি আল্লাহ্ পাক, তাঁর সকল মালাক, তাঁর যাবতীয় (আসমানী) কিতাব, তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান স্থাপন করবে।” (মুসলিম)
উবাদা বিন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘হে বৎস, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ না তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটারই ছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা কোনো দিন তোমার জীবনে ঘটার ছিল না। রাসূল (সাঃ)-কে একথা আমি বলতে শুনেছিঃ
((إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمُ، فَقَالَ لَهُ: اكْتُبْ، فَقَالَ: رَبِّ! وَمَاذَا أَكْتُبُ؟ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ تَقُومَ السَّاعَةُ))
“সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘আলা যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। সৃষ্টির পরই তিনি কলমকে বললেন, ‘লিখ’। ২ কলম বলল, ‘হে আমর রব, আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের তাকদীর লিপিবদ্ধ কর”।
হে বৎস রাসূল (সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছিঃ
((مَنْ مَّاتَ عَلَىٰ غَيْرِ هَٰذَا فَلَيْسَ مِنِّي)) (سنن أبي داود، السنة، باب في القدر، ح:۴۷۰۰)
“যে ব্যক্তি (তাকদীরের উপর) বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০]
ইমাম আহমদের অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছেঃ
((إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ تَعَالَىٰ الْقَلَمُ، فَقَالَ لَهُ: اكْتُبْ، فَجَرَى فِيْ تِلْكَ السَّاعَةَ مَا هُوَ كَائِنٌ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ)) (مسند أحمد:۳۱۷/۵)
“আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনে কলম কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহূর্তে থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল। [মুসনাদ আহামাদ, ৫/৩১৮]
ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((فَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ بِالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ أَحْرَقَهُ اللَّهُ بِالنَّارِ)) (أخرجه ابن وهب في القدر رقم (۲۶) وابن أبي عاصم في “كتاب السنة”، ح:١١١)
“যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভাল-মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ পাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন”। [ইবনে ওয়াহাব এর আল-কদর: ২৬; ইবনে আবী আসেম এর কিতাবুস সুন্নাহ: হাদীস নং ১১১]
ইবনু দায়লামী থেকে বর্ণিত আছে, কাতাদাহ (রাহি.) বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে গেলাম। তারপর তাকে বললাম, তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশমূলক কথা বলুন। এর ফলে হয়ত আল্লাহ তা‘আলা আমার অন্তর থেকে উক্ত জমাটবাঁধা কাদা (কথা) দূর করে দেবেন। তখন তিনি বললেনঃ
((لَوْ أَنْفَقْتَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ، وَتَعْلَمَ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَلَوْ مُتَّ عَلَىٰ غَيْرِ هَٰذَا لَكُنْتَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ)) (سنن أبي داود، السنة، باب في القدر، ح:۴۶۹۹ ومسند أحمد، ح:۱۸۲/۵، ۱۸۵، ۱۸۹)
“তুমি যদি উহুদ (পাহাড়) পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান কর, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথাও জেনে রাখ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হত না। আর তোমার জীবনে যা ঘটার ছিল না, তা কখনো ঘটত না। তাকদীর সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যুবরণ করলে, তুমি অবশ্যই জাহান্নামী হবে”।
তিনি বললেন অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামানা এবং যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ)- এর নিকট গেলাম। তাঁরা প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ) থেকে এ জাতীয় হাদীস এর কথাই উল্লেখ করলেন। [সুনানে আবী দাউদ, হাদীস নং ৪৬৯৯; মুসনাদ আহমাদ, ৫/১৮২, ১৮৫, ১৮৯]
* তাকদীর তথা ভাগ্যের প্রতি ঈমান বলতে বুঝায় যে, প্রত্যেক বিষয়েই আল্লাহর পূর্ব হতেই জ্ঞান আছে বিশ্বাস করা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তার সবকিছুই তিনি লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তা বিশ্বাস করা। এ কথা বিশ্বাস করা যে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন এবং তিনি বান্দার সমস্ত কর্মের স্রষ্টা। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা’ আল্লাহর বান্দা ও তাদের কর্মের স্রষ্টা। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত তার সমস্ত কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে না, তাকে মুমিন বলা হবে না, কেননা এক্ষেত্রে অনেক অনেক দালীল রয়েছে। তাকদীরকে অস্বীকার করা কখনও ইসলাম থেকে বহিস্কারের কারণ হয়। যেমন কেউ যদি আল্লাহ পূর্ব হতে জ্ঞান রাখেন অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ লাওহে মাহ্ফুজে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখেন তা অস্বীকার করে। তাকদীর অস্বীকার করা কখনও বিদা‘আতের পর্যায় যা তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী; যেমনঃ আল্লাহর ইচ্ছা বা তার সৃষ্টির ব্যাপারে যে ব্যাপকতা কেউ যদি অস্বীকার করে।
১ ইবনে উমার (রাঃ) এভাবে বলার কারণ হল, আল্লাহ তা‘আলা শুধু মুসলমানদের নিকট থেকেই সৎ আমলসমূহ কবূল করেন। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখে না। সে বরং অস্বীকার করে সে নিশ্চয়ই মুসলমান নয়। যদিও সে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করে তার থেকে গ্রহণ করা হবে না। তিনি তাঁর কথার সমর্থনে নবী (সাঃ) এর উক্ত হাদীস পেশ করেন। তাকদীরের ভাল-মন্দ বলতে বান্দার স্বার্থে ভাল-মন্দের কথা বলা হয়েছে। যদিও আল্লাহর কর্ম সবই ভাল এবং হিকমতের অন্তর্গত ও সে অনুযায়ী।
২ তাকদীরের ব্যাপারে উবাদাহ বিন সামেতের হাদীসের মর্ম হল- তাকদীরের সব কিছু লিখা হয়ে গেছে। তাকদীরের প্রতি ঈমানের তাৎপর্য হল, মানুষের কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষেত্রে বাধ্য নয় বরং তার স্বাধীনতা রয়েছে, সে তার ইচ্ছামত ভাল-মন্দ কাজ করতে পারে। এ জন্যই তাকে নেকি করার আদেশ ও গুনাহ থেকে বাঁচার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি বাধ্যই হতো তবে তাকে নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। ‘আল্লাহ তাকে (কলমকে) বললেন লিখ’। অত্র হাদীস দ্বারা লেখার গুরুত্ব প্রমাণিত হয় এবং ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘আলা যা সৃষ্টি করেলেন তা হচ্ছে কলম। গবেষক উলামাদের এ ব্যাপারে সঠিক অভিমত হচ্ছে যে, আল্লাহ যখন কলম সৃষ্টি করলেন তখন তাকে এ কথা বললেন এমন নয় যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম কলমই সৃষ্টি করেছেন। কেননা তার প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ।
০১। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরয, এর বর্ণনা।
০২। তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা।
০৩। তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই, তার আমল বাতিল।
০৪। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে না সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম।
০৫। সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করা হয়েছে তার উল্লেখ।
০৬। কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পরক্ষণেই কলম দ্বারা তা উক্ত সময়ে লিখা হয়ে গেছে।
০৭। যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না, তার ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) দায়িত্ব মুক্ত।
০৮। সালফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনকে প্রশ্ন করে জেনে নেয়া।
০৯। উলামায়ে কিরাম এমনভাবে প্রশ্নকারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সন্দেহ দূর হয়ে যেত। জবাবের নিয়ম হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রাসূল (সাঃ) এর (কথা ও কাজের) দিকে সম্পৃক্ত করতেন।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ
((قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلً: وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً، أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً، أَوْ لِيَخْلُقُوا شَعِيرَةً)) (صحيح البخاري، اللباس، باب نقض الصور، ح:۵۹۵۳، ۷۵۵۹ وَصحيح مسلم، اللباس، باب تحريم تصوير صورة الحيوان……، ح:۲۱۱۱)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আমার সৃষ্টির মত সৃষ্টি করতে চায়। তাদের শক্তি থাকলে তারা একটা অণু সৃষ্টি করুক অথবা একটি খাদ্যের দানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি যবের দানা তৈরি করুক।” ১ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৫৩, ৭৫৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১১]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ
((أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهِئُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ)) (صحيح البخاري، اللباس، باب ما وطئ من التصاوير، ح:٤٥٩٥ وصحيح مسلم، اللباس، باب تحريم تصوير صورة الحيوان….، ح:۲۱۰۷)
“কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি পাবে তারাই যারা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির মত ছবি বা চিত্র অংকন করে।” ২ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১০৭]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ
((كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ، يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ يُّعَذَّبُ بهَا فِي جَهَنَّمَ)) (صحيح البخاري، البيوع، باب بيع الصاوير التي ليس فيها روح …، ح:۲۲۲۵، ۵٩۶۳، ۷۰۴۶ صحيح مسلم اللباس، باب تحريم تصوير صورة الحيوان….، ح:۲۱۱۰)
অর্থঃ “প্রত্যেক চিত্র অঙ্কনকারীই জাহান্নামী। চিত্রকর যতটি (প্রাণীর) চিত্র এঁকেছে ততটি প্রাণ তাকে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে।” ৩ [সহীহ বুখারী হাদীস নং ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১০]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ‘মারফু’ হদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
((مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ يَومَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ وَلَيْسَ بِنَفِخٍ)) (صحيح البخاري، اللباس، باب من صور صورة كلف يوم القيامة…، ح:۵۹۲۳ وصحيح مسلم اللباس، باب تحريم تصوير صورة الحيوان….، ح:۲۱۱۰)
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন (প্রাণীর) চিত্র অঙ্কন করবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ চিত্রে আত্মা দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে আত্মা দিতে পারবে না।” ৪ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১০]
আবুল হাইয়াজ আসাদী (রাহি.) বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেনঃ
((أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه سلم أَنْ لَّا تَدَعْ صُورَةً إِلَّا طَمَسْتَهَا، وَلَاقَبْرًا مُّشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ)) (صحيح مسلم، الجنائز، باب الأمر بتسوية القبر، ح:٩٦٩)
“আমি কি তোমাদের এমন কাজে পাঠাব না, যে কাজে জন্য রাসূল (সাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সে কাজটি হল, ‘তুমি কোন চিত্র/মুর্তী/ভস্কার্য-কে ধ্বংস না করে ছাড়বে না। আর কোন উঁচু কবরকে (মাটির) সমান না করে ছাড়বে না।” ৫ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৯]
* ছবি অঙ্কনকারী বা চিত্র শিল্পীদের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে অত্র অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। হাত দ্বারা কোন জিনিসের নির্ধারিত আকৃতি ও পদ্ধতিতে তৈরিকারীকে চিত্র শিল্পী বলে। ছবি অঙ্কন মূলত দু’কারণে হারাম। প্রথমটি হচ্ছে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সৃষ্টির বিষয়ে সাদৃশ্য বা প্রতিযোগিতা প্রকাশ পায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে, ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে শিরকের পথ খুলে যায়। কেননা পৌত্তলিকদের মূর্তি পূজার সূচনা ছবি অঙ্কনের মাধ্যমেই হয়েছিল বলে প্রমাণিত। এ জন্যে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার দাবীই হল, চিত্র-ছবি যেন প্রসার ঘটতে না পারে।
১ “তারা অণু সৃষ্টি করুক অথবা একটি খাদ্যের দানা সৃষ্টি করুক”, এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা সকল চিত্র শিল্পীদের চ্যালেঞ্জ করেছেন। চিত্র অঙ্কনকারীরা তাদের ধারণায় আল্লাহরই সৃষ্টির মত সৃষ্টি করে, অথচ প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর সৃষ্টির মত কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না। অতএব এ জন্যই চিত্রকররা নিজেদের কাজকে আল্লাহরই অনুরূপ ধারণা করাতে তারা সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে বড় জালেমে পরিণত।
২ চিত্রাংকন সাদৃশ্য জ্ঞাপন দুই কারণে মহা কুফুরী হয়ে থাকে। প্রথম: কোন চিত্র শিল্পীদের যদি জানা থাকে যে, তার ছবির পূজা করা হবে তবে উক্ত চিত্র শিল্পী কাফির বলে গণ্য হবে। দ্বিতীয়ত: চিত্রকর কোন চিত্র তৈরি করে এ ধারণা রাখে যে, তার বানান চিত্র আল্লাহর বানান জিনিস থেকেও উত্তম। উক্ত দু’প্রকার ব্যতীত অন্যভাবে যেমনঃ হাত দ্বারা অঙ্কন বা খোদাই করে চিত্র বানান কুফুরী নয়, যার ফলে মানুষ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। তবে অবশ্যই কবীরা গুনাহ এদের প্রতি অভিশাপ ও জাহান্নামের হুশিয়ারী রয়েছে।
৩ “কিয়ামতের দিন তাকে এ চিত্রের আত্মা দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে”, তবে বুঝা যায় যে, উল্লেখিত শাস্তি শুধুমাত্র কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কনের ব্যাপারেই।
৪ “অথচ আত্মা দিতে সক্ষম হবে না” কেননা এটা শুধু আল্লাহই ক্ষমতা রাখেন।
৫ এ হাদীসে চিত্র ও ছবি বানানো হারামের আরও একটি কারণ দর্শানো হয়েছে তা হল, এটি শিরকের মাধ্যমের অন্তর্ভূক্ত। আর এ হাদীসে রসূল (সাঃ) উচ্চ কবর ও চিত্র-ছবিকে এক সাথে বর্ণনা করেছেন। যেমন ভাবে কবর শিরকের মাধ্যম হয়ে থাকে আনুরূপ ছবি-চিত্র ও শিরকের মাধ্যম। এজন্যই হুকুম দেয়া হয়েছে যে, কোন প্রতিমূর্তি ও উচ্চ কবর যেন না থাকে। উঁচু কবর অবশিষ্ট থাকা শিরকের একটি বিরাট মাধ্যম অনুরূপ চিত্র বা ছবিও অবশিষ্ট থাকা শিরকের একটি বিরাট মাধ্যম।
০১। চিত্রকরদের ব্যাপারে খুব কঠোরতা অবলম্বন।
০২। কঠোরতা অবলম্বনের কারণ সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করে দেয়া। এখানে কঠোরতা অবলম্বনের কারণ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে আদব রক্ষা না করা। এর প্রমাণে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী।
০৩। সৃষ্টি করার ব্যাপারে আল্লাহর কুদরত বা সৃজনশীল ক্ষমতা। অপরদিকে সৃষ্টির ব্যাপারে বান্দার অক্ষমতা। তাই আল্লাহ চিত্রকরদেরকে বলেছেন, “তোমাদের ক্ষমতা থাকলে তোমরা অণু অথবা একটা দানা কিংবা গমের দানা তৈরি করে নিয়ে এসো।”
০৪। চিত্রকরের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা।
০৫। চিত্রকর যতটা (প্রাণীর) ছবি আঁকবে, শাস্তি ভোগ করার জন্য ততটা প্রাণ তাকে দেয়া হবে এবং এর দ্বারাই জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
০৬। অঙ্কিত ছবিতে রূহ বা আত্মা দেয়ার জন্য চিত্রকরকে বাধ্য করা হবে।
০৭। [প্রাণীর] ছবি পাওয়া মাত্রই ধ্বংস করার নির্দেশ।
Page- 7