Dawah wa Tablig Islamic Website

Help Line = Mob no. +8801783385346 :: Email Address = shalampb@gmail.com || To see the Arabic (Saudi Print) correctly use "Mozilla Firefox" Browser.

8

Page- 8


অধ্যায়-৬১

অধিক কসম খাওয়া সম্পর্কে শরীয়তের বিধান *

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেঃ

وَاحۡفَظُوٓاْ أَيۡمَٰنَكُمۡۚ ٩٨ ٱلۡمَائِدَةِ

“তোমরা শপথসমূহকে হেফাযত করো।” [সূরা মায়িদা:৮৯]

আবূ হুরাইরা (রাজিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, আমি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহে ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছিঃ

((اَلْحَلِفُ مَنْفَقَةٌ لِلسِّلْعَةِ مَمْحَقَةٌ لِّلْكَسْبِ)) (صحيح البخاري، البيوع، باب “يمحق اللَّه الربوا ويربي الصدقات”، ح:۲۰۸۷ وصحيح مسلم، المساقاة، باب النحى عن الحلف في البيع، ح:۱۶۰۶)

“[অধিক] শপথ, সম্পদ বিনষ্টকারী এবং উপার্জন ধ্বংসকারী।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬০৬]

সালমান (রাজিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণতি আছে, রাসূল (রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ

((ثَلَاثَةٌ لَّا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ، وَلَا يُزَكِّيْهُمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: أُشَيْمِطٌ زَانٍ، وَّعَائِلٌ مُّسْتَكْبِرٌ، وَّرَجُولٌ جَعَلَ اللَّهُ بِضَاعَتَهُ، وَلَا يَشْتَرِي إِلَّا بِيَمِينِهِ، وَلَا يَبِيْعُ إِلَّا بِيَمِينِهِ)) (معجم الكبير للطير اني، رقم:۶۱۱۱)

“তিন প্রকার লোকদের সাথে আল্লাহ তাআ’লা [কিয়ামতের দিন] কথা বলবেন না, তাদেরকে [গুনাহ্‌ মাফের মাধ্যমে] পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে, বৃদ্ধ জিনাকারী, অহংকারী গরীব, আর যে ব্যক্তি তার ব্যবসায়ী পণ্যকে আল্লাহ বানিয়েছে অর্থাৎ কসম করা ব্যতীত সে পণ্য ক্রয়ও করে না, কসম করা ব্যতীত পণ্য বিক্রয়ও করে না।” [ত্বাবারানী, ৬১১১]

ইমরান বিন হুসাইন (রাযিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ

((خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، قَالَ عِمْرَانُ: فَلَا أَدْرِي أَذَكَرَ بَعْدَ قَرْنِهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا، ثُمَّ إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَّشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلَا يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ)) (صحيح البخاري، فضائل أصحاب النبي صلى اللَّه عليه وسلم باب فضائل أصحاب النبي صلى اللَّه عليه وسلم…، ح: ۳۶۵۰ وصحيح مسلم، فضائل الصحابة، ثم الذين يلونهم، ح: ۵۳۵۲)

“আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে আমার যুগ, তারপর উত্তম হচ্ছে তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারা। তারপর তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারা। তারপর তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারা। ইমরান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পরে দু’যুগের কথা বলেছেন নাকি তিন যুগের কথা বলেছন তা আমি বলতে পারছি না। অতঃপর তিনি [রাসূল (সাঃ)] বলেন, তোমাদের পরে এমন এক কাওম আসবে যারা সাক্ষ্য দেবে, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে, আমানত রক্ষা করবে না। তারা মান্নত করবে, কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। আর তাদের শরীরে চর্বি দেখা দিবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩৫]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ

((خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِنَهُ، وَيَمِنُهُ شَهَادَتَهُ)) (صحيح البخارى، فَضائل أصحاب النبي صلى اللَّه عليه وسلم، باب فضائل أصحاب ومن صحب النبي…..، ح:۳۶۵۱ وصحيح مسلم، فضائل الصحابة، باب فضل الصحابة ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم، ح:۶۵۳۳)

“সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার যুগের মানুষ। এরপর উত্তম হল, এর পরবর্তীতে আগমনকারী লোকেরা। তারপর উত্তম হল যারা তাদের পরবর্তীতে আসবে তারা। অতঃপর এমন এক কওমের আগমন ঘটবে যাদের কারও সাক্ষ্য কসমের আগেই হয়ে যাবে, আবার কসম সাক্ষ্যের আগেই হয়ে যাবে।” [অর্থাৎ কসম ও সাক্ষ্যের মধ্যে কোন মিল থাকবে না। কসম ও সাক্ষ্য উভয়টাই মিথ্যা হবে। [সহীহ বুখারী হাদীস নং- ৩৬৫১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩৩]

ইবরাহীম নাখয়ী বলেন, আমরা ছোট ছিলাম তখন মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য আমাদের অভিভাবকগণ শাস্তি দিতেন।

ব্যাখ্যাঃ

* অধিক মাত্রায় কসম খাওয়া তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদকে পূর্ণ করতে পেরেছে সে কখনো কসম-শপথের সময় আল্লাহকে সামনে আনে না। যদিও কথায় কথায় অনর্থক কসম খাওয়াতে মাফ রয়েছে, তারপরেও তাওহীদপন্থীর জন্য বেশী বেশী কসম করা থেকে মুখ ও অন্তরকে মুক্ত রাখা মুস্তাহাব

‘উপার্জন ধ্বংসকারী এটিও একটি শাস্তি, কেননা সে কসম দ্বারা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনার ইচ্ছা করে নি। বরং সম্পদ বিক্রয়ই তার উদ্দেশ্য।’

‘যে তার ব্যবসায়ী পণ্যকে আল্লাহ বানিয়েছে’; সে ব্যক্তি ঘৃণিত ও কবীরা গুণাহগার বলে গণ্য হবে।

‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য আমাদে অভিভাবকগণ শাস্তি দিতেন’- এ কথার দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের সালফে সালেহীন তাদের সন্তানদের আল্লাহর প্রতি সম্মান ও বড়ত্ব প্রদর্শনের ব্যাপারে আদব শিক্ষা দিতেন।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। কসম-শপথ রক্ষা করার জন্য উপদেশ দান।

০২। মিথ্যা কসম বাণিজ্যিক পণ্যের ক্ষতি টেনে আনে, রোজগারের বরকত (বৃদ্ধি) নষ্ট করে।

০৩। যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় করে না, তার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ।

০৪। স্বল্প কারণেও গুনাহ বিরাট আকার ধারণ করতে পারে, এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ।

০৫। বিনা প্রয়োজনে কসমকারীদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন।

০৬। রাসূল (সাঃ) কর্তৃক তিন অথবা চার যুগ বা কালের লোকদের প্রশংসা জ্ঞাপন এবং এর পরবর্তীতে যা ঘটবে তার উল্লেখ।

০৭। সাক্ষ্য না চাইলেও যারা সাক্ষ্য প্রদান করবে এমন লোকদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন।

০৮। মিথ্যা সাক্ষ্য ও ওয়াদর জন্য সালফে-সালেহীন কর্তৃক ছোটদেরকে শাস্তি প্রদান।


অধ্যায়-৬২

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জিম্মাদারী সম্পর্কিত বিষয়। *

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেঃ

وَأَوۡفُواْ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ إِذَا عَٰهَدتُّمۡ وَلَا تَنۡقُضُواْ الۡأَيۡمَٰنَ بَعۡدَ تَوۡكِيۡدِهَا وَقَدۡ جَعَلۡتُمُ اللَّهَ عَلَيۡكُمۡ كَفِيلًاۚ إِنَّ اللَّهَ يَعۡلَمُ مَاتَفۡعَلُونَ ١٩ ٱلنَّحۡلِ

অর্থঃ “তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন তোমরা অঙ্গীকার কর এবং তোমরা আল্লাহার নামে তোমাদের শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ কর না; তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।” [সূরা নাহ্‌ল: ৯১]

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছোট হোক বা বড় হোক [কোন যুদ্ধে] যখন সেনাবাহিনীতে কাউকে আমীর বা সেনাপতি নিযুক্ত করতেন, তখন তাকে ‘তাক্বওয়ার’ উপদেশ দিতেন এবং তার সাথে যে সব মুসলমান থাকত তাদেরকে উত্তম উপদেশ দিতেন এবং বলতেনঃ

((اعْزُوا بِاسْمِ اللَّهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ، اغْزُوا وَلَا تَغُلُّوا، وَلَا تَغْدِرُوا وَلَا تَمْثُلُوا، وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا، وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَىٰ ثَلَاثِ خِصَالٍ أَوْ خِلَالٍ، فَأَيَّتُهُنَّ مَا أَجَبُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ، وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ، فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَىٰ دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْ هُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَٰلِكَ فَلَهُمْ مَّا لِلْمُهَاجِرِينَ، وَعَلَيهِمْ مَّا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَّتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ، يَجْرِي عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللَّهِ تَعَالَىٰ، وَلَا يَكُونُ لَهُمْ فِي الْغَنِيمَةِ وَالْفَيءِ شَيْءٌ، إِلَّا أَنْ يُّجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَسْأَلْهُمُ الْجِزْيَةَ، فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ، فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنُ بِاللَّهِ وَقَاتِلْهُمْ، وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلَا تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ، وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ، فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ، وإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَىٰ حُكْمِ اللَّهِ فَلَا تُنْزِلْهُمْ عَلَىٰ حُكْمَ اللَّهِ، وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَىٰ حُكْمِكَ فَإِنَّكَ تَدْرِي أَتُصِبُ حُكْمَ اللَّهِ أَمْ لَا)) (صحيح مسلم، الجهاد، باب تأمير الإمام الأمراء على البعوت ووصيته إياهم بآداب الغزو وغيرها، ح:۱۷۳۱)

অর্থঃ “তোমরা আল্লাহর নামে তাঁর রাস্তায় যুদ্ধ কর। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। তোমরা যুদ্ধ কর, তবে বাড়াবাড়ি কর না, বিশ্বাস ঘাতকতা কর না। তোমরা শত্রুর নাক-কান কেট না বা অঙ্গ বিকৃত কর না। তুমি যখন তোমার মুশরিক শত্রুদের মোকাবেলা করবে, তখন তিনটি বিষয়ের দিকে তাদেরকে আহবান জানাবে। যে কোন একটি বিষয়ে তারা তোমার আহ্বানে সাড়া দিলে তা গ্রহণ করে নিও, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিও। অতপর ইসলামের দিকে আহ্বান করো। যদি তারা তোমার আহ্বানে সাড়া দেয়, তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করে নিও। এরপর তাদেরকে তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে দারুল মুহাজিরীনে স্থানন্তরিত হওয়ার জন্য অর্থাৎ হিজরত করার জন্য আহ্বান জানাও। হিজরত করলে তাদেরকে এ কথাও জানিয়ে দাও, মুহাজিরদের জন্য যে অধিকার রয়েছে, তাদেরও সে অধিকার আছে, সাথে সাথে মোহাজিরদের যা করণীয় তাদেরও তাই করণীয়। আর যদি তারা হিজরতের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদেরকে বলে দিও যে, তারা গ্রাম্য সাধারণ মুসলিম বেদুইনদের মর্যাদা পাবে। তাদের উপর আল্লাহর হুকুম আহকাম জারি হবে। তবে ‘গনিমত’ বা যুদ্ধ-লব্ধ অতিরিক্ত সম্পদের ভাগ তারা মুসলমানদের সাথে জিহাদে আংশ গ্রহণ ব্যতীত পাবে না। এটাও যদি তারা অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, তারা কর দিতে সম্মত কি না। যদি কর দিতে সম্মত হয়, তবে তা গ্রহণ কর, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ কর। কিন্তু যদি কর দিতে তারা অস্বীকার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।”

তুমি যদি কোন দুর্গের লোকদেরকে অবরোধ কর, আর দুর্গের লোকেরা যদি তখন চায় যে, তুমি তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জিম্মায় রেখে দাও। তবে তুমি কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জিম্মায় রেখ না বরং তোমরা এবং তোমাদের সঙ্গী-সাথীদের জিম্মায় রেখে দিও। কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জিম্মাদারী রক্ষা করার চেয়ে তোমরা এবং তোমাদের সঙ্গী-সথীদের জিম্মাদারী রক্ষা করা অনেক সহজ। তুমি যদি কোন দুর্গের অধিবাসীদেরকে অবরোধ কর। আর তারা যদি আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে সম্মতি চায়, তবে তুমি আল্লাহর ফায়সালার ব্যাপারে তাদের কথায় সম্মতি দিও না; বরং তোমার নিজের ফায়সালার ব্যাপারে সম্মতি দিও। কারণ, তুমি জান না তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালার ক্ষেত্রে তুমি সঠিক ভূমিকা নিতে পারবে কি না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩১]

ব্যাখ্যাঃ

* আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জিম্মাদারীর অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিশ্রুতি দেয়া।

“আল্লাহর নামে তোমরা যখন কোন শক্ত ওয়াদা কর তখন তা পুরা কর” এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, মানুষের মাঝে লেন-দেনের সময় আল্লাহর নামে যে কসম খাওয়া হয় তা বুঝান হয়েছে। আল্লাহর প্রতি বড়ত্ব ও সম্মন-প্রদর্শনপূর্বক সে ওয়াদা বা চুক্তি বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব এবং উক্ত প্রকার ওয়াদা পূর্ণ না করার অর্থ আল্লাহকে অবজ্ঞা ও হেয় করা।

“যে সব শত্রুদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জিম্মাদারীর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সে সব অবস্থা থেকে দূরে থাকা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা।” কেননা, এসব অবস্থায় যখন প্রতিশ্রুতি এবং আল্লাহর সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করা হয়। অত্র হাদীসে তাওহীদবাদী ও দ্বীনি ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, যে তারা যেন এ ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকে যে, আল্লাহর বড়ত্ব প্রদর্শনে যেন কোনরূপ ত্রুটি না হয়। কেননা, আজকের এ সংশয় ও ফেতনার যুগে সাধারণ মানুষ তোমার মত সুন্নাত ও তাওহীদের ঝাণ্ডাবাহী ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি রাখবে যে, আল্লাহর বড়ত্বের ব্যাপারে তুমি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল, ফলে তোমার দেখাদেখি তারও আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ করবে। শপথ করা, আল্লাহর জিম্মাদারীর প্রতিশ্রুতি অথবা সাক্ষ্য দেয়া বা সাধারণ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যেন অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কেননা, এ সব ক্ষেত্রে আলেম-উলামা ও দ্বীনদারদের জন্য সামান্য অসতর্কতার ফলে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিতে ঘাটতি বা ক্ষতি দেখা দিতে পারে। (এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সৈনিকদেরকে উপদেশ দেন, শত্রুদেরকে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের জিম্মাদারী পরিহার করে তাদের নিজেদের জিম্মাদারিতে রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মাদারী অবস্থায় জিম্মিদের প্রতি ত্রুটি হয়ে গেলে তা আল্লাহর তা‘আলার সাথে বড় বেয়াদবী করা হবে।)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। আল্লাহর জিম্মা, নবীর জিম্মা এবং মুমিনদের জিম্মার মধ্যে পার্থক্য।

০২। বিষয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বিপজ্জনক বিষয়টি গ্রহণ করা প্রতি দিক নির্দেশনা।

০৩। আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা।

০৪। যে ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

০৫। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং কাফিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

০৬। আল্লাহর হুকুম এবং আলিমদের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য।

০৭। সাহাবী কর্তৃক প্রয়োজনের সময় এমন বিচার ফায়সালা হয়ে যাওয়া যা আল্লাহর হুকুমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তাও তিনি জানেন না।


অধ্যায়-৬৩

আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম * করার পরিণতি।

জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ

((قَالَ رَجُولٌ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لِفُلَانٍ فَقَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجّلَّ: مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّىٰ عَلَيَّ اَنْ لَّا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ، فَإِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ)) (صحيح مسلم، البر والوصلة، باب النهى عن تقنيط الإنسان من رحمة اللَّه، ح:۲۶۲۱)

“এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহর কসম, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘আমি অমুককে ক্ষমা করব না।’- এ কথা বলে দেয়ার স্পর্ধা কার আছে; আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর তোমার (কসমকারীর) আমল বাতিল করে দিলাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২১]

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কসম করে উল্লেখিত কথা বলেছিল, সে ছিল একজন আবেদ।’ আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তি তাঁর একটি মাত্র কথার মাধ্যমে তাঁর দুনিয়া এবং আখিরাতের আমল বরবাদ করে ফেলেছে।

ব্যাখ্যাঃ

* আল্লাহ্‌র ইচ্ছাধীন বা তাঁর ইখতিয়ারের বিষয়ে উপর কেহ ফয়সালা দিলে বা কথা বললে বা কসম খেলে তা হবে জঘন্য পাপ কাজ এ জন্য তার সকল আমল বরবাদ করা হলো এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেনঃ “আমি অমুককে ক্ষমা করবো না, একথা বলে দেয়ার স্পর্ধা কার আছে?” এখানে একজনের প্রতি এক আবেদ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই আবেদের কছে ঐ লোকটিকে পাপি বলে মনে হওয়ার কারণে আল্লাহর ইখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করে বলেছিল “তাকে আল্লাহ তা‘আল ক্ষমা করবেন না” কিন্তু এ কথা বলার অধিকার আল্লাহ কোন সৃষ্টিকে দেন নাই তাই আল্লাহ্‌ তা‘আলার ইখতিয়ারে কথা বলা মহা-পাপের কারণে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় এবং যাকে উদ্যেশ্য এ কথা বলা হয়েছিল তাঁকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (কোন ব্যক্তি পাপ কাজ করেফেললে তাকে বলা যায় “তুমি সাবধান হও এটা পাপ কাজ” বা এমন পাপ কাজ, যে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করে তার কিতাবে বলেছেন “যে এ কাজ করে অথবা বিশ্বাস করে অতঃপর তাওবা না করে মারা যায় তাকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না।” কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট না করে, সে কাজ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ যেমন বলেছেন তেমন ভাবে বললে তাতে কোন পাপ নেই বরং উত্তম সুয়াব বা পুরস্কার আছে।)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে অহংকারবশত মাতব্বরী করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। [অর্থাৎ মাতব্বরী না করা]

০২। আমাদের কারো জাহান্নাম তার জুতার ফাতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী।

০৩। জান্নাতও অনুরূপ নিকটবর্তী।

০৪। এ অধ্যায়ে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, একজন লোক মাত্র একটি কথার মাধ্যমে তার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করতে পারে।

০৫। কোন কোন সময় মানুষকে এমন সামান্য কারণেও মাফ করে দেয়া হয়, যা তার কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়।


অধ্যায়-৬৪

আল্লাহর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির নিকট সুপারিশ কামনা হারাম

জুবাইর বিন মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একজন আরব বেদুঈন এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত, পরিবার পরিজন ক্ষুধার্ত, সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করুন। আমরা আপনার কাছে আল্লাহর মাধ্যমে সুপারিশ করছি, আর আল্লাহর কাছে আপনার মাধ্যমে সুপারিশ করছি’ এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে লাগলেন, সুবহান আল্লাহ, সুবহান আল্লাহ এভাবে তিনি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে লাগলেন এবং তাঁর ও সাহাবায়ে কিরামের চেহারায় পরিবর্তন প্রতিভাত হচ্ছিল। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ

((وَيْحَكَ! أَتَدْرِي مَا اللَّهُ؟ إِنَّ شَأْنَ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَٰلِكَ، إِنَّهُ لَا يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَىٰ أَحَدٍ)) (سنن أبي داود، باب في الجهمية، ح:٤۷۲۶)

“তুমি ধ্বংস হও, আল্লাহর মর্যাদা কত বড়, তা কি তুমি জান? তুমি যা মনে করছ আল্লাহর মর্যাদা ও শান এর চেয়ে অনেক বেশি। কোন সৃষ্টির কাছেই আল্লাহর মাধ্যমে সুপারিশ করা যায় না।” [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭২৬, এ হাদীসটি আলবানী রহঃ যঈফ বললেও এর মতনে যাতে আল্লাহর মর্যদা ও শান বর্ণিত হয়েছে তা কুরআনুল কারিমের বহু আয়াত ও অন্যান্য হাদীস দ্বারা সুসাব্যস্ত]

ব্যাখ্যাঃ

* আল্লাহকে উসীলা বা মাধ্যম বানান তাঁর কোন সৃষ্টির নিকট জায়েয নয়, চরম বেয়াদবী ও তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী।

কোন মাখলুকের কাছে আল্লাহকে উসীলা বানানো আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, কারণ, যাকে উসীলা বানানো হয় তার চেয়ে মর্যদার দিক দিয়ে সে ব্যক্তি সম্মানিত হয় যার নৈকট্য লাভের জন্য উসীলা বানান হয়েছে অথচ আল্লাহর তুলনায় মাখলুক কতই না তুচ্ছ ও মর্যদাহীন। এ জন্যই উক্ত বেদুঈনের কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বার বার ‘সুবহান আল্লাহ’ বলেন এবং সাব্যস্ত করেন যে, এসব কুধারণা ও বিষয় থেকে আল্লাহ পূত পবিত্র ও মহান এবং তিনি সমস্ত অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। যখন বেদুঈন বললঃ “আপনার কাছে আল্লাহকে সুপারিশকারী হিসেবে পেশ করছি” -তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদ।

০২। সৃষ্টির কাছে আল্লাহর সুপারিশের কথায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কিরামের চেহারায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল।

০৩। نتشفع بك على اللَّه (আমরা আল্লাহর কাছে আপনার সুপারিশ কামনা করছি) এ কথা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যাখ্যান করেন নি।

০৪। ‘সুবহান আল্লাহ’, অর্থঃ ‘আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা’ এর তাফসীরের ব্যাপারে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে আশ্চর্য ও প্রতিবাদ করতে ব্যবহৃত হয়েছে। [‘সুবহান আল্লাহ’ দিয়ে আমরা আল্লাহ যিকিরও করে থাকি।]

০৫। মুসলমানগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জীবদ্দশায় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার জন্য তাঁর নিকট আবেদন করেছিল।


অধ্যায়-৬৫

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সল্লাম) কর্তৃক তাওহীদ সংরক্ষণ এবং শিরকের মূলোৎপাটন বিষয়

আব্দুল্লাহ বিন আশ্‌-শিখ্‌খির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বললেনঃ

((انْطَلَقْتُ فِي وَفْدِ بَنِي عَامِرٍ إِلَىٰ رَسُولِ اللَّهِ صَلى اللَّه عليه وَ سلم فَقُلْنَا أَنْتَ سَيِّدُنَا فَقَالَ: السَّيِّدُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَىٰ قُلْنَا: وَأَفْضَلُنَا فَضْلًا، وَّأَعْظَمُنَا طَوْلًا، فَقَالَ قُولُوا بِقَوْلِكُمْ أَوْ بَعْضِ قَوْلِكُمْ-وَلَا يَسْتَجْرِيَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ)) (سنن أبي داود، الأدب، باب في كراهية التمادح، ح:٤۸۰۶ وَمسند أحمد: ۲٤/٤، ۲۵)

‘আমি বনী আমেরের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সল্লাম) এর নিকট গেলাম। আমরা তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম “سيد” (আপনি আমাদের ‘সাইয়্যেদ’) তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সল্লাম) বললেন, “السيد” (আল্লাহই হচ্ছেন ‘আস্‌-সাইয়্যেদ’)। আমরা বললাম, ‘আমাদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আমাদের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ও ধৈর্যশীল। এরপর তিনি বললেন, ‘তোমরা তোমাদের কথা বলে যাও। শয়তান যেন তোমাদের উপর কর্তৃত্ব লাভ করতে না পারে।’ [সুনান-ই আবু দাউদ, ৪৮০৬; মুসনাদ আহমাদ, ৪/২৪, ২৫]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, কিতপয় লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সল্লাম) কে লক্ষ্য করে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, হে আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং আমাদের প্রভু তনয়।’ তখন তিনি বললেনঃ

((يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا بِقَوْلِكُمْ، وَلَا يَسْتَهْوِيَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ، أَنَا مُحَمَّدٌ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ وَاللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنْ تَرْفَعُونِي فَوْقَ مَنْزِلَتِي الَّتِي أَنْزَلَنِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ)) (عمل اليوم والليلة للنسائي، ح:۲٤۸، ۲٤٩ ومسند أحمد: ۱۵۳/۳، ۲۳۱، ۲٤۹)

“হে লোক সকল, তোমরা তোমাদের কথা বলে যাও। শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করতে না পারে। আমি হচ্ছি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর (আল্লাহর দাসের) পুত্র এবং আল্লাহর এক জন বান্দা বা দাস ও রাসূল। আল্লহ তা‘আলা আমাকে যে মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন, তোমরা এর উর্দ্ধে আমাকে স্থান দেবে, এটা আমি পছন্দ করি না।” [নাসাঈ, হাদীস নং- ২৮৪; মুসনাদ আহামাদ, হাদীস নং ৩/১৫৩, ২৪১, ২৪৯]

ব্যাখ্যাঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সল্লাম) যদিও (বনী আদম সম্রাট) তথাপি তাওহীদ সংরক্ষণ এবং শিরকের পথ প্রতিরোধে কারণে তাঁকে ‘সাইয়্যেদ’ বলা থেকে নিষেধ করেছেন। উলামায়ে কিরাম উল্লেখ করেছেন যে, কোন ব্যক্তিকে ‘আস্‌-সাইয়্যেদ’ বলা মারাত্বক অপরাধ, কেননা, এতে ব্যাপকতার অর্থ বিদ্যমান আছে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক লোক কতিপয় ব্যক্তিকে (যাদেরকে ওলী মনে করা হয়) যেমন- সাইয়্যেদ বাদাভীকে ‘আস্‌-সাইয়্যেদ’ বলে আখ্যায়িত করে এবং তার সম্মানে সীমালংঘন করে।

কারো মুখোমুখি প্রশংসা ও গুণকীর্তন শয়তানী আচরণ এতে অনেক সময় মনের মাঝে অহংকার ও বড়ত্ব জন্ম নিতে পারে, যার ফলে তার জন্য আসবে লাঞ্চনা, কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকেই একমাত্র তাওফীক দাতা ও সকল ক্ষমাতর উৎস মনে করবে না, নিজের হটকারীতার কারণে সে অবশ্যই অপমানিত হবে লাঞ্ছিত হবে। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সল্লাম) সাহাবায়ে কিরামকে বলেন, শয়তান যেন তোমাদের উপর বিজয়ী না হতে পারে।

তারা নবী (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সল্লাম) কে যে গুণে গুণান্বিত করেছিল প্রকৃত পক্ষে সে গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল; কিন্তু তিনি শিরকের যাবতীয় পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য উক্ত কথা বলেন, যাতে তার ফলে শিরক স্থান না পায়। সুতরাং যে কেউ কারো সম্মান ও বড়ত্ব প্রকাশ করবে তখন শয়তান তাদের উভয়ের মধ্যে প্রবেশ করে তাদের অন্তরকে এমন বানিয়ে দিবে যে সম্মান প্রদানকারী শিরক পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে যেভাবে তার সম্মান প্রদান বৈধ নয় সে ভাবে তা প্রদান করবে। তাই কাউকে সীমাহীন সম্মান ও মর্যদা প্রদান করলে পর্যয়ক্রমে সেটা শিরক পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহ তা’আলা আমাকে যে মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন, তোমরা এর উর্দ্ধে আমাকে স্থান দাও, এটা আমি পছন্দ করি না।’ এ আধ্যায়টি শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার যাবতীয় মাধ্যমকেও বন্ধ করে দেয়ার অপরিহার্যতা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন না করার জন্য মানুষের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ।

০২। কাউকে ‘আপনি আমাদের প্রভু বা মনিব’ বলে সম্বোধন করা হলে জবাবে তার কি বলা উচিত, এ ব্যাপারে জ্ঞান লাভ।

০৩। লোকেরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সল্লাম) এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে কিছু কথা বলার পর তিনি বলেছিলেন, ‘শয়তান যেন তোমাদের উপর শক্তিশালী না হয়।’ অথচ তারা তাঁর ব্যাপারে হক কথাই বলেছিল। এর তাৎপর্য অনুধাবন করা।

০৪। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সল্লাম) এর বাণীঃ ما أحب أن ترفعونى فوقَ منزلتى অর্থাৎ তোমরা আমাকে আমার স্বীয় মর্যাদার উপরে স্থান দাও, এটা আমি পছন্দ করি না। এ কথার তাৎপর্য উপলব্ধী করা।


অধ্যায়-৬৬

আল্লাহ তা‘আলার মহানত্ব এবং উচ্চ মর্যাদার বর্ণনা

আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ ٦٧ الزُّمَر

অর্থঃ “তারা আল্লাহর যথার্থ মার্যাদা নিরূপণ করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।” [সূরা যুমার- ৬৭]

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একজন ইহুদী পণ্ডিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, “হে মুহাম্মদ, আমরা (তাওরাত কিতবে) দেখতে পাই যে, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা সমস্ত আকশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত যমীনকে যমীনকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজীকে এক আঙ্গুলে, পানি এক আঙ্গুলে ভূতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন, আমিই সম্রাট।” এ কথা শুনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদী পণ্ডিতের কথার সমর্থনে এমনভাব হেসে দিলেন যে তাঁর দন্ত মোবারক দেখা যাচ্ছিল। অতঃপর তিনি এ আয়াতটুকু পড়লেনঃ

وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ ٦٧ الزُّمَر

অর্থঃ “তারা আল্লাহর যথার্থ মার্যাদা নিরূপণ করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন তাঁর হাতের মুঠোত থাকবে।” [সূরা যুমার- ৬৭]

মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে, পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে থাকবে, তারপর এগুলোকে ঝাকুনি দিয়ে তিনি বলবেন, “আমি রাজাধিরাজ, আমি আল্লাহ।”

বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, “সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভূতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।” [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]

ইবনে উমার (রাঃ) মারফু হাদীসে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

((يَطْوِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّماوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَىٰ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَّا الْمَلِكُ، أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُنَ؟ ثُمَّ يَطْوِي الأَرَضِينَ السَّبْعَ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِشِمَالِهِ ثُمَّ يَقُولُ: أَنَّا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟)) (صحيح مسلم، صفات المنافقين وأحكامهم، باب صفة القيامة والجنة والنار، ح:۲۷۸۸)

অর্থঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহু ‘আয্‌য ওয়া জাল্লা- সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন, ‘আমি হচ্ছি শাহানশাহ (রাজাধীরাজ)। অত্যাচারী আর জালিমরা আজ কোথায়? অহংকারীরা আজ কোথায়?’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮৮]

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

((مَا السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالأَرَضُونَ السَّبْعُ فِي كَفِّ الرَّحْمَٰنِ إِلَّا كَخَرْدَلَةٍ فِي يَدِ أَحَدِكُمْ)) (تفسير ابن جرير للطبري:۳۲/۲٤)

অর্থঃ “সাত তবক আসমান ও যমীন আল্লাহ পাকের হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারও হাতে সরিষার দানার মত।” [তাফসীর ইবনে জারীর ত্বাবারী, ২৪/৩২]

আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ

رَسُوْلَ اللَّهِ صلى اللَّه عليه وسلم يَقُوْلُ: مَا الْكُرْسِيُّ فِي الْعَرْشِ إِلَّا كَحَلْقَةٍ مِّنْ حَدِيْدٍ أُلْقِيَتْ بَيْنَ ظَهْرَيْ فَلَاةِ مِّنَ الأَرْضِ)) (تفسير ابن جرير للطيري ح:٤۵۲۲ والأسماء والصفات للبيهقي، ح:۵۱۰)

অর্থঃ “কুরসীর মধ্যে সপ্তাকাশের অবস্থান ঠিক যেন, একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের (মুদ্রার) মত।” তিনি বলেন, আবু যর (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ কথা বলতে শুনেছি, “আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান হচ্ছে ঠিক ভূপৃষ্ঠে কোন উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা একটি আংটির মতো।” [তাফসীরে ত্বাবারী, হাদীস নং ৪৫২২; বায়হক্বী, হাদীস নং ৫১০]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ

((بَيْنَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَالَّتِي تَلِيهَا خَمْسُمِائَةِ عَامٍ، وَبَيْنَ كُلِّ سَمَآءٍ وَّسَمَآءٍ خَمْسُمِائَةِ عَامٍ، وَّبَيْنَ السَّمَآءِ السَّبِعَةِ وَالْكُرْسِيِّ خَمْسُمِائَةِ عَامٍ، وَّبَيْنَ الْكُرْسِيِّ وَالْمَآءِ خَمْسُمِائَةِ عَامٍ، وَّالْعَرْشُ فَوْقَ الْمَاءِ، وَاللَّهُ فَوْقَ الْعَرْشِ، لَا يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَيْءٌ مِّنْ أَعْمَالِكُمْ)) (أخرجه الدارمي في الرد على الجهمية، ح: ۲۶ وابن خزيمة في كتاب التوحيد، ح:۵٩٤، والطبراني في المعجم الكبير، ح:۸٩۸۷)

অর্থঃ “দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকেশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এমনিভাবে সপ্তম আকাশ ও কুরসীর মধ্যে দুরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। কুরসী এবং পানির মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। আর আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তা‘আলা সমুন্নত হয়েছেন আরশের উপর। তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই।” [দারিমী, হাদীস নং ২৬; ইবনে খুজায়মা, হাদীস নং ৫৯৪; ত্বাবারনী, হাদীস নং ৮৯৯৭।]

এ হাদীসটি ইবনে মাহ্‌দী, হাম্মাদ বিন সালামা হতে, তিনি আসেম হতে, তিনি যির্‌র হতে এবং যির্‌র আব্দুল্লাহ হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ হাদীস মাসউদী আসেম হতে, তিনি আবি ওয়ায়েল হতে এবং তিনি আব্দুল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন।

আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন।

((هَلْ تَدْرُونَ كَمْ بَيْنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ؟ قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْ مِائَةِ سَنَةٍ، وَمِنْ كُلِّ سَمَآءٍ إِلَىٰ سَمَآءٍ مَّسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ، وَّكِثَفُ كُلِّ سَمَآءٍ مَّسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ، وَّبَيْنَ السَّمَآءِ السَّابِعَةِ وَالْعَرْشِ بَحْرٌ بَيْنَ أَسْفَلِهِ وَأَعْلَاهُ كَمَا بَيْنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ، وَاللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فَوْقَ ذَالِكَ، وَلَيْسَ يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَيْءٌ مِّنْ أَعْمَالِ بَنِي آدَمَ)) (سنن أبي داود، السنة، باب في الجهمعة، ح:٤۷۲۳ ومسند أحمد: ۲۰۶/۱، ۲۰۷)

অর্থঃ “তোমরা কি জান, আসমান ও যমীনের মধ্যে দুরত্ব কত? আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, ‘আসমান ও জমিনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এক আকাশের ঘনত্ব (পুরু ও মোটা) পাঁচশ বছরের পথ। সপ্তম আকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার উপরিভাগ ও তলদেশের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তা‘আলা এর উপরই সমুন্নত রয়েছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকাণ্ডই তাঁর অজানা নয়।” [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭২৩; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১/২০৬, ২০৭]

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

০১। وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَامَةِ এর তাফসীর।

০২। এ অধ্যায়ের আলোচিত জ্ঞান ও এতদসংশ্লিষ্ট জ্ঞানের চর্চা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগেই ইহুদীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তারা এ জ্ঞানকে অস্বীকারও করত না এবং অপব্যাখ্যাও করত না।

০৩। ইহুদী পণ্ডিত ব্যক্তি যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর ক্ষমতা সংক্রান্ত কথা বলল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথাকে সত্যায়িত করলেন এবং এর সমর্থনে কুরআনের আয়াতও নাযিল হল।

০৪। ইহুদী পণ্ডিত কর্তৃক আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কিত মহাজ্ঞানের কথা উল্লেখ করা হলে, আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাসির উদ্রেক হওয়ার রহস্য।

০৫। আল্লাহ তা‘আলার দু’হস্ত মোবারকের সুস্পষ্ট উল্লেখ। আকাশ মণ্ডলি তাঁর ডান হাতে, আর সমগ্র যমিন তার অপর হাতে নিবদ্ধ থাকবে।

০৬। অপর হাতকে বাম হাত বলে নামকরণ করার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

০৭। কিয়ামতের দিন অত্যাচারী এবং অহংকারীদের প্রতি আল্লাহর শাস্তিও উল্লেখ।

০৮। ‘তোমাদের কারও হাতে একটা সরিষা দানার মত’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কথার তাৎপর্য।

০৯। আকাশমণ্ডলীর তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।

১০। কুরসীর তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।

১১। কুরসী এবং পানি থেকে আরশ সম্পূর্ণ আলাদা।

১২। প্রতিটি আকাশের মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবাধানের উল্লেখ।

১৩। সপ্তাকাশ ও কুরসীর মধ্যে ব্যবধান।

১৪। কুরসী এবং পানির মধ্যে দূরত্ব।

১৫। আরশের অবস্থান পানির উপরে।

১৬। আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে।

১৭। আকাশ ও যমীনের দূরত্বের উল্লেখ।

১৮। প্রতিটি আকাশের ঘনত্ব (পুরু) পাঁচশ বছরের পথ।

১৯। আকাশমণ্ডলীর উপর যে সমুদ্র রয়েছে তার উর্দ্ধদেশ ও তলদেশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ।

গ্রন্থখানির মহামতি প্রণেতা মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত্‌-তামীমী (রহঃ) অত্র অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে এ বইটির ইতি টেনেছেন যা মূলত অতি উত্তম ও মহান পন্থায় সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা এ অধ্যায়ে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর মর্যাদা, জালালাত এবং তাঁরই মহাশক্তির যে বর্ণনা রয়েছে সে ব্যাপারে যে জ্ঞান লাভ করবে সে মহান রবের একান্ত বিনয়ী ও প্রকৃত আনুগত্যে নিজেকে নিবেদিত করবে। এ বাস্তবতার উপর অনেক প্রমাণাদি এখানে উল্লেখ করেছেন। কেননা, তাঁর এ সব মহৎ ও পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীই হচ্ছে, তিনি যে একক মা’বুদ তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলার বানী, “তারা আল্লহর যথার্থ মর্যাদা নিরূপণ করতে পারে নি?” অর্থাৎ আল্লাহ যে মর্যাদা ও বড়ত্বের অধিকারী বান্দা তা তাঁকে দিতে পারেনি অন্যথায় তারা তাঁর ব্যতীরেকে অন্য কারও ইবাদত বা উপাসনা করত না। যখন তুমি তোমার পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় রবের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবে তখন জানতে পারবে যে, তিনি মর্যাদাপূর্ণ গুণাবলীর অধিকারী আরশের উপর ঊন্নিত। এ প্রশস্ত ও বিশাল জগতে তাঁরই আদেশ ও নিষেধ বলবৎ রয়েছে, এ জগতে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর অফুরন্ত রহমত ও নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেন। যার থেকে ইচ্ছা বালা-মুসিবত দূর করেন। তিনিই যাবতীয় অনুগ্র ও আবেদনের মালিক। তুমি জেনে রাখ আকাশ মণ্ডলীতে তাঁরই কর্তৃত্ব এবং আকাশমণ্ডলী ফেরেস্তাতারাজী তাঁরই ইবাদতে মশগুল ও তাঁরই দিকে তাদের যাবতীয় প্রবণতা। তাঁর বিশাল রাজত্ব আকাশমণ্ডলীতে তাঁর পুরা কর্তৃত্ব বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও তোমার মত এক নগণ্য ও তুচ্ছের প্রতি সম্বোধন করে ইবাদতের আদেশ করেন, এতে কি তুমি নিজেকে ধন্য মনে করবে না? তেমনি তোমাকে তাক্বওয়া অর্জনের হুকুম দেন, যদি তোমার জ্ঞান থাকে তবে তুমি এতে ধন্য। তুমি যদি আল্লাহ তা‘আলার হক বুঝতে পার এবং তাঁর উচ্চ-গুণাবলীর জ্ঞান হয় তবে তুমি অবশ্যই তাঁর বশ্যতা ও আনুগত্য প্রকাশ না করে থাকতে পারবে না। ফলে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে পারলে তুমি নিজেক ধন্য মনে করবে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা চালাবে এবং যখন তুমি তাঁর কালাম তেলওয়াত করবে তখন দেখবে যে মহান আল্লাহর ব্যাপারে তোমার সেই আগের সম্মান মর্যাদা ও বড়ত্বের ব্যাপারে বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে। হৃদয়ে ঈমানের দৃঢ়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা এবং তাঁর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে বিশাল রাজত্ব ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে চিন্তা ও গবেষণা করা। যে ব্যাপারে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।

সমাপ্ত

Page- 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

শাইখ আব্দুর রব আফ্ফান- দাওয়াহ ওয়া তাবলীগ ক্লাস, বিষয়- আকিদা (শবেবরাত)-২০, তাং- ১০-৫-২০১৭
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী – DWT class, বিষয়- রাসূলের আনুগত্য- ১৮, তাং- ১৭-০৮-২০১৭
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলালা মাদানী- কুরবানী-২০১৭, তাং- ১০-০৮-২০১৭
শাইখ জাকির হুসাইন- দাওয়াহ ওয়া তবলীগ ক্লাস, বিষয়- আরবী ভাষা শিক্ষা-৫, তাং- ২০-১১-২০১৬
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল – DWT ক্লাস, বিষয়- যিলহজ্জ্ব মাসের ১০ দিনের আমল ও ফযিল, তাং- ১-৮-২০১৭
আহলি সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা, শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী
© Dawah wa Tablig since 2013