Page- 4
পূর্বের কোন নমুনা ব্যতিরেকে প্রতিটি নতুন আবিস্কারকে বিদাত বলে, চাই তা দ্বীনের মাঝে হোক বা দুনিয়ার বিষয় হোক।
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِذَا قَضيٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ١١٧ ٱلۡبَقَرَةِ
“তিনি (আল্লাহ) নবোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের কোন নমুনা ছাড়াই উদ্ভাবক। [সূরা বাকারাঃ ১১৭]
قُلۡ مَا كُنتُمۡ بِدۡعٗا مِّنَ ٱلرُّسُلِ وَمَآ أَدۡرِي مَايُفۡعَلُ بِي وَلَابِكُمۡۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَايُحَيٰٓ إِلَيَّ وَمَآ أَنَاْ إِلَّا نَذِيرٞ مُّبِينٞ ٩ ٱلۡأَحۡقَافِ
“বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই।” [সূরা আহকাফঃ ৯]
…. وَجَعَلۡنَا فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ رَأۡفَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَاكَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ رِضۡوَٰنِ ٱللَّهِ فَمَارَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۖ ….. ٢٧ ٱلۡحَدِيدِ
“আমি তার (ঈসা আ:) অনুসারীদের অন্তরে স্থাপন করেছি নম্রতা ও দয়া আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে, আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি, কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে” [সূরা হাদীদঃ ২৭]
আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ও দ্বীন মনে করে দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন আবিস্কার, যা শরীয়তের প্রতিদ্বন্দ্বী ও সদৃশ এবং যার আসলে বা গুণাগুনের প্রমাণে কোন বিশুদ্ধ দলিল নেই। [আল-ই‘তিসাম-শাতিবীঃ ১/৩৭] অন্যভাবে বলা যায়, দ্বীনের মাঝে যে সব বিষয়াদি নতুন আবিস্কার যা নবী (সাঃ) ও সাহাবা কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই, চাই তা আকীদায় হোক বা আমলে হোক।
এর দ্বারা সুস্পষ্ট হলো যে, দুনিয়াবি যে সব বিষয়াদি নতুন নতুন আবিস্কার হয়েছে বা হচ্ছে কিংবা হবে তা বিদাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং ইসলাম প্রতিটি উপকারী দুনিয়াবী বিষয়ে নতুন আবিস্কারকে উৎসাহিত ও সমর্থন করে।
ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَاتَتَّبِعُواْ مِنۡ دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّاتَذَكَّرُونَ ٣ ٱلۡأَعۡرَافِ
“তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে আলী-বুজর্গদের অনুসরণ করো না” [সূরা আ‘রাফঃ ৩]
“যে কেউ আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম]
“যে কেউ যে কোন আমল করে যার প্রতি আমাদের সম্মতি নেই তা পরিত্যাজ্য” [মুসলিম]
“যে কেউ যে কোন আমল করে যার প্রতি আমাদের সম্মতি নেই তা পরিত্যাগযোগ্য।” [মুসলিম]
“তোমরা (দ্বীনের মাঝে) নতুন আবিষ্কার জিনিস থেকে বিরত থাক। নিশ্চয় (দ্বীনের মধ্যে) প্রতিটি নতুন আবিষ্কার বিদাত এবং প্রতিটি বিদাতই ভ্রষ্ট ও প্রতিটি ভ্রষ্টের ঠিকানা জাহান্নাম।” [নাসাঈ]
“অনুসরণ কর, বিদাত কর না। কারণ পূর্ববর্তীরা তোমাদের জন্য যথেষ্ট করে দিয়েছে।
প্রতিটি ইবাদত যা মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহাবাগণ করেননি তা কর না। কারণ তাঁরা পরবর্তীদের জন্য কিছুই ছেড়ে যাননি।
প্রতিটি বিদাতই ভ্রষ্ট যদিও মানুষ তাকে হাসানাহ তথা উত্তম মনে করে।
যেখানে পূর্বের জাতি [নবী (সাঃ) ও সহাবীগণ] দাঁড়িয়ে গেছেন সেখানেই দাঁড়ানো ওয়াজিব।
যে ব্যক্তি বিদাত আবিষ্কার করে তাকে হাসানাহ তথা উত্তম ধারণা করে, নিশ্চয় সে মুহাম্মদ (সাঃ) কে রেসালাতের খেয়ানতকারী সাব্যস্ত করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ … ٣ ٱلۡمَتائِدَةِ “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [সূরা মায়েদাঃ ৩]
তুমি সালাফদের (সহাবী ও তাবেঈ) পদাঙ্ক অনুসরণ কর যদিও মানুষ তোমাকে বর্জন করে। আর মানুষদের মাতমত পরিহার কর যদিও তাকে তারা চাকচিক্য ও সজ্জিত করুক না কেন।
দ্বীনের মাঝে বিদাত দুই প্রকারঃ
আকীদাতে বিভিন্ন ধরনের বাতিল উক্তির বিদাত। যেমনঃ জাহমিয়্যা, মু‘তাজিলা, রাফেযা ও সমস্ত পথভ্রষ্ট দল ও তাদের আকীদা সমূহ।
যে বিদাত ইবাদতের মধ্যে করা হয়। ইহা আবার দুই প্রকারঃ
যা ইবাদতে মধ্যে হয়। ঐ সব ইবাদত যা নতুনভাবে যোগ করা হয়েছে শরিয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমনঃ ঈদে মীলাদুন্নবী।
ইবাদতের স্থান নির্ধারণে। যেমন: মসজিদ ছাড়া বাড়িতে ইতেকাফ করা।
দ্বীনের মাঝে সকল প্রকার বিদাত হারাম ও ভ্রষ্ট। নবী (সাঃ) বলেনঃ “তোমরা (দ্বীনের মধ্যে) সকল প্রকার নতুন জিনিস থেকে সাবধান থাক। কারণ, (দ্বীনের মাঝে) প্রতিটি নতুন কিছু বিদাত এবং প্রতিটি বিদাতই ভ্রষ্ট।” [সহিহুল জামে’-আলবানী হাঃ ২৫৪৬]
“যে কেউ আমাদের দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু আবিস্কার করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত না, তা পরিত্যাজ্য।” [বুখারী হাঃ ২৬৯৭ ও মুসলিম হাঃ ১৭১৮]
“যে কেউ যে কোন আমল করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা তা অগ্রহণযোগ্য।” [মুসলিম হাঃ ১৭১৮ ও ১৮]
এসব হাদীস প্রমাণ করে যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন জিনিস বিদাত। আর প্রতিটি বিদাত ভ্রষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য। এর অর্থ এই যে, বিদাত চাহে ইবাদতে হোক বা আকীদাতে হোক সবই হারাম। তবে হারামের স্তর বিদাতের প্রকার হিসেবে তফাত হবে।
যেমনঃ কবরের পার্শ্বে কবরবাসীর নৈকট্য লাভের আশায় তওয়াফ করা, কুরবানি করা, নজর-নিয়াজ পেশ করা, তাদেরকে আহবান করা ও বিপদ মুক্তির জন্য ডাকা। অনুরূপ সীমালঙ্ঘনকারী জাহমিয়্যা ও মু‘তাজিলা সম্প্রদায়ের বাতিল আকীদাসমূহ।
যেমনঃ কবরের উপর ঘর বানানো ও সেখানে সালাত কায়েম করা।
যেমনঃ খারেজী, কাদারী ও মুর্জিয়া সম্প্রদায়ের কথায় ও আকীদার মাঝে শরিয়তের দলিলের বিপরীত বিদাতসমূহ।
যেমনঃ কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য খাশী হয়ে যাওয়া, সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে রোজা পালন করা ও বৈরাগী হওয়া।
[নোটঃ বিদাতকে হাসানাহ ও সাইয়িআহ ভাগ করা একটি জঘন্য অপরাধ। কারণ, নবী (সাঃ) প্রতিটি বিদাতকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন। চাই তা আকীদাতে হোক বা আমলে বা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথায় হোক সবই গুমরাহ ও তা হতে দ্বীন সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।]
বিবিধ।
না জেনে বা ভুল কিংবা কারণ বশত: কোন আলেমের বিদাত করা।
বিদাতীর আমল কবুল হয় না।
জাহান্নামে প্রবেশ।
ইচ্ছামত কুরআন ও হদীসের অপব্যাখ্যা করা।
এমন প্রতিটি ইবাদত যাকে শরিয়ত সাধারণ রেখেছে কিন্তু মানুষ তা বিশেষ স্থান বা সময় কিংবা পদ্ধতি অথবা সংখ্যা দ্বারা নির্দিষ্ট করেছে। [আহকামুল জানায়েজ-শাইখ আলবানী (রহ:) দ্রষ্টব্য।]
বিদাতীদের সাথে উঠা-বসা, লেনদেন ও আত্মীয়তা না করা।
বিবিধ।
[নোটঃ যদি এ সমস্ত কাজে কল্যাণ থাকত, তবে নবী (সা:) ও তাঁর পরে সাহাবা কেরাম (রা:) অবশ্যই আমাদের পূর্বে তা করতেন। অতএব, যদি আল্লাহ ও তাঁর নবী (সা:) কে মহব্বত করেন, তাহলে একমাত্র দ্বীনের হিদায়াতের অনুসরণ করুন এবং সর্বপ্রকার বিদাত থেকে দূরে থাকুন।]
“জাহল” আরবী শব্দ যার অর্থ অজ্ঞতা। আর অজ্ঞ ব্যক্তিকে বলে “জাহিল” তথা মূর্খ। ইসলাম পূর্বযুগকে জাহিলিয়াত বলা হয়। কারণ সে যুগে মানুষ আল্লাহ, রসূল ও শরিয়াতের বিধিবিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ও মূর্খ ছিল।
ইহা নবী (সা:) এর আবির্ভাবের পূর্বযুগকে বলা হয়। এ যুগ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালতের পরে শেষ হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন যুগ বা শতাব্দিকে সাধারণভাবে জাহিলিয়াতের যুগ বলা যাবে না।
ইহা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা দেশ কিংবা শহর অথবা কাজকে বলা যেতে পারে। যেমন: নবী (সাঃ) বলেন: “আমার উম্মতে জাহেলিয়াতের চারটি কাজ।” [মুসলিম] রসূলুল্লাহ (সাঃ) আবু যার গিফারীকে বলেনঃ “তোমার মাঝে জাহিলিয়াতের গুণ রয়েছে।”
পৃথিবীতে হাতে গণা কিছু আহলি কিতাব ছাড়া আরব-অনারব সমস্ত জমিনবাসী বিবেকের উপর তালাবদ্ধ করে, চক্ষু থাকতে অন্ধ হয়ে সিরাতে মুস্তাকীম ছেড়ে শয়তানের পথ ধরেছিল। আর দ্বীন-দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জাহিলিয়াতের ঘন অন্ধকারে ভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঠিক এমন সময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন পথহারা, দিশাহারা বরবর মানুষদেরকে হিদায়াতের জন্য শেষ নবী রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মদ (সা:) কে এ ধরাধামে জাহিলিয়াতের সকল রসম ও রিওয়াজ উৎখাত করে তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রেরণ করেন।
তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর অবিরাম আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত ও কুরআন-সুন্নার তাবলীগ করে জাহিলিয়াতের অন্ধকার থেকে মানুষকে মুক্ত করেন এবং সর্বপ্রকার জাহিলিয়াতের রসম ও রিওয়াজ থেকে সাবধান এবং সেগুলোর সাথে সদৃশতা ও ঐক্যমত পোষণ করতে বারণ করেন। এ ছাড়া উম্মতকে আল্লাহর মনোনীত পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামের সত্যের উপর রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।
কিন্তু মুসলিম জাতি যুগ-যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানব-দানব শয়তানের ফাঁদে পড়ে ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের অদ্ভুত, অলৌকিক, অস্বাভাবিক ও চমকপ্রদ কার্যকলাপের গোলক ধাঁধায় আটকা পড়ে এবং হিরা গুহা থেকে বিকশিত অহীর জ্ঞান থেকে দূরে সরে প্রাচীন জাহিলিয়াতের সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে যে, দেখে মনে হয় সে যুগের জাহিলিয়াতকে এ যুগের কিছু জাহিলিয়াত হার মানিয়েছে।
বর্তমানে ইসলাম ও নব জাহিলিয়াতের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। জাহিলী যুগের যে সকল বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে দ্বন্দ্ব হয়েছিল এবং তিনি তার সাথে বিরোধিতা করেছিলেন, আজ আবার সেগুলো আমাদের মুসলিম সমাজকে মহামারীর মত গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক ইসলাম এবং বিভিন্ন ধর্ম ব্যবসায়ী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বানানো ইসলামের মধ্যে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব দিবালোকের মত সুস্পষ্ট। এ সব প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য জানা একান্ত প্রয়োজন। কেননা নকল বস্তু সম্পর্কে জানা থাকলেই কেবল আসল সব্স্তু চেনা সম্ভব হয়। আপনাদের সমীপে ইসলাম ও জাহিলিয়াতের দ্বন্দ্ব ১০৫ টি বিষয় উল্লেখ করা হলো। আশা করি ইহা সঠিক ভাবে জানলে নিজেকে পরিবারকে, সমাজ ও মুসলিম মিল্লাতকে জাহিলিয়াতের অক্টোপাস্ থেকে নিষ্কৃতি দান করা যাবে।
Page- 4