Page 2
নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে তাকওয়া তথা আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন এবং নিষেধসমূহ পরিহার করার জন্য আদেশ করেন। তাকওয়ার অর্থ সাধারণত আল্লাহভীরুতাকে বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ আল্লাহর আদেশ ত্যাগ করতে বা নিষেধ উপেক্ষা করতে আল্লাহকে ভয় করা। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, আল্লাহর সমস্ত আদেশ পালন ও সকল নিষেধ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া। এ সম্পর্কিত আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
قَالَ يَٰقَوۡمِ إِنِّى لَكُمۡ نَذِيرٞ مُّبِينٌ ٢ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ٣ نوح
“তিনি (নূহ্) বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয় যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা নূহ্ – ২-৩]
كَذَّبَتۡ عَادٌ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٢٣ إِذۡ قَالَ لَهُمۡ أَخُوهُمۡ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٢٤ إِنِّى لَكُمۡ رَسُولٌ أَمِينٞ ١٢٥ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٢٦ شعراء
“আ’দ জাতি রসূগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বললেন, তোমাদের কি ভয় নাই? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১২৩-১২৬]
كَذَّبَتۡ ثَمُودُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٤١ إِذۡ قَالَ لَهُمۡ أَخُوهُمۡ صَٰلِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٤٢ إِنِّى لَكُمۡ رَسُولٌ أَمِينٌ ١٤٣ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَ أَطِيعُونِ ١٤٤ شعراء
“সামূদ জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন- তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১৪১-১৪৪]
كَذَّبَتۡ قَوۡمُ لُوطٍٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٦٠ إِذۡ قَالَ لَهُمۡ أَخُوهُمۡ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ ١٦١ إِنِّي لَكُمۡ رَسُولٌ أَمِينٞ ١٦٢ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ١٦٣ شعراء
“লূতের জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই লূত, তাদেরকে বললেনঃ তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুস্বরণ কর।” [সূরা শু‘আরা ১৬০-১৬৩]
وَلَقَدۡ قَالَ لَهُمۡ هَٰرُونُ مِن قَبۡلُ يَٰقَوۡمِ إِنَّمَا فُتِنتُمۡ بِهِۦۖ وَإِنَّ رَبَّكُمُ ٱلرَّحۡمَٰنُ فَٱتَّبِعُونِى وَأَطِيعُوٓاْ أَمۡرِي ٩٠ طه
“হারূন তাদের পূর্বেই বলেছিলেনঃ হে আমার জাতি, তোমরা তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছ এবং তোমাদের পালনকর্তা দয়াময়। আতএব, তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।” [সূরা ত্বহা- ৯০]
وَلَمَّا جَآءَ عِيسَيٰ بِٱلۡبَيِّنَٰتِ قَالَ قَدۡ جِئۡتُكُمۡ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُمۡ بَعۡضَ ٱلَّذِى تَخۡتَلِفُونَ فِيهِۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٦٣ زخرف
“ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করলেন, তখন বললেন, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা যে যে বিষয়ে মতভেদ করছ তা ব্যক্ত করার জন্যে এসেছি। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার কথা মান।” [সূরা জুখরুফ- ৬৩]
وَلِلَّهِ مَافِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَافِى ٱلۡأَرۡضِۗ وَلَقَدۡ وَصَّيۡنَا الَّذِيۡنَ اُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَإِيَّاكُمۡ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ وَإِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ لِلَّهِ مَافِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَافِى ٱلۡأَرۡضِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدٗا ١٣١ نساء
“আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহ তা‘আলার, তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়াছিলাম তাদেরকেও আদেশ করেছিলাম এবং তোমাদেরকেও আদেশ করছি যে, তোমরা আল্লহকে ভয় কর, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলেও আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর আল্লাহ অভাব শূন্য (সৃষ্টির অভাব পূরণের সব কিছু তাঁর আছে) প্রশংসিত।” [সূরা নিসা- ১৩১]
নবী-রসূলগণ তাঁদের জতিকে পরকালের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। পরকালে পুনরুত্থান, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের কথা অবহিত করেন। সেই দিন এক দলের পরিণাম হবে জান্নাত আর অপর দলের পরিণাম হবে জাহান্নাম।
وَكَذَٰلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ قُرۡءَانًا عَرَبِيّٗا لِّتُنذِرَ أُمَّ ٱلۡقُرَىٰ وَمَنۡ حَوۡلَهَا وَتُنۡذِرَ يَوۡمَ ٱلۡجَمۡعِ لَارَيۡبَفِيهِۚ فَرِيقٞ فِي ٱلۡجَنَّةِ وَفَرِيقٞ فِي ٱلسَّعِيرِ ٧ شورَىٰ
“এই ভাবে আমি এই আরবী কুরআ’ন আপনার উপর ওহী করি যাতে আপনি মক্কার আধিবাসিদেরকে এবং এর পার্শ্ববর্তী লোকদেরকে সেই একত্রিত হওয়ার দিবস সম্পর্কে সতর্ক করেন যাতে কোন সন্দেহ নাই, এদের কতক জন্নাতবাসী হবে আর কতক জাহান্নামবাসী হবে।” [সূরা শূরা- ৭]
كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ اِلَّامَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ آلِ عمران
“প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যু হবে, নিশ্চই তোমরা কিয়ামতের দনি পূর্ণ প্রতিফল প্রাপ্ত হবে, এবং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে আর জান্নাতে প্রবেশ করান হবে সে সাফল্য লাভ করবে, পার্থিব জীবন কেবল খেল-তামাসা ছাড়া আর কিছু নয়।” [সূরা আল ইমরান- ১৮৫]
وَمَاٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَعِبٞ وَلَهۡوٞۖ وَلَلدَّارُ ٱلۡأَخِرَةُ خَيۡرٞ لِّلَّذِنَ يَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٣٢ أنعَام
“এই পার্থিব জীবন খেল-তামাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা ভয় করে তাদের জন্য আখেরাত উত্তম, তোমাদের কি জ্ঞান হয় না?” [সূরা আন‘আম- ৩২]
مَن كَانَ يُرِدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَايُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأَخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَاصَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦ هُود
“যে পার্থিব জীবন ও তাঁর চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হলো সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হলো।” [সূরা হূদ- ১৫-১৬]
وَمَنۡ أَرَادَ ٱلۡأَخِرَةَ وَسَعَيٰ لَهَا سَعۡيَهَا وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ كَانَ سَعۡيُهُم مَّشۡكُورٗا ١٩ إِسراء
“আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” [সূরা বনী ইসরাঈল- ১৯]
إِنَّ ٱلَّذِينَ لَايُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأَخِرَةِ زَيَّنَّالَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَهُمۡ يَعۡمَهُونَ ٤ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَهُمۡ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ وَهُمۡ فِي ٱلۡأَخِرَةِ هُمُ ٱلۡأَخۡسَرُونَ ٥ نَمل
“যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকাণ্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা নামল- ৪-৫]
تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡأَخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِينَ لَايُرِيدُونَ عُلُوّٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَافَسَادٗاۚ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِينَ ٨٣ قَصص
“সেই পরকালের বাসস্থান আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। আল্লাহভীরুদের জন্য শুভ পরিণাম।” [সূরা কাসাস- ৮৩]
وَمَا هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَهۡوٞ وَلَعِبٞۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡأَخِرَةَ لَهِيَ ٱلۡحَيَوَانُۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٦٤ عَنكَوت
“এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের বাসস্থানই প্রকৃত স্থায়ী জীবন, যদি তারা এটা জানত।” [সূরা আনকাবূত- ৬৪]
يَٰقَومِ إِنَّمَا هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا مَتَٰعٞ وَإِنَّ ٱلۡأَخِرَةَ هِيَ دَارُ ٱلۡقَرَارِ ٣٩ غَافِر
“হে আমার জাতি, পার্থিব এ জীবন তো কেবল (ক্ষণস্থায়ী) উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বাসস্থান।” [সূরা গাফির – ৩৯]
زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَي ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧ تَغَابُن
“কাফেররা দাবী করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করা হবে। আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।” [সূরা তাগাবুন- ৭]
قَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٢ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ١٠٣ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ مُؤۡمِنُون
“যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা জাহান্নামেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুকমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।” [সূরা-মুমিনূন- ১০২-১০৪]
وَٱلۡوَزۡنُ يَومَئِذٍ ٱلۡحَقُّۚ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٨ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ بِمَ كَانُواْ بِئَايَٰتِنَا يَضۡلِمُونَ ٩ أَعۡرَاف
“আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারা এমন যে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করত।” [সূরা আরাফ- ৮-৯]
فَأَمَّامَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٧ وَأَمَّامَنۡ خَفًّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَاهِيَهۡ ١٠ نَارٌ حَامِيَةٞ ١١ قَارِعة
“আতএব, যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি কি তা জানেন? তা হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত আগুন।” [সূরা কারি‘য়া- ৬-১১]
অভিধানিক অর্থঃ ঈমান অর্থ বিশ্বাস করা। যে কোন ধরনের বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়। চাই তওহিদী বিশ্বাস হোক বা শিরকি বিশ্বাস হোক। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে শুধুমাত্র তাওহিদী বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়।
ঈমানের সংজ্ঞাঃ ঈমান হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস করা, জবান দ্বারা স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজে বাস্তবায়ন করার নাম, যা সৎ আমলের মাধ্যমে বাড়ে এবং পাপ কাজের দ্বারা কমে।
মুমিন হলোঃ অন্তরে বিশ্বাসকারী, মুখে স্বীকারকারী এবং সে মোতাবেক আমলকারী ও সৎ আমল করে ঈমান বৃদ্ধিকারী ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ ত্যাগ করে ঈমানের হেফাজতকারী।
٥٨ – (٣٥) حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ – أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ – شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ» (اخرجه مسلم)
“….আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “ঈমানের ৭৩ বা ৬৩ টির বেশী শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর সর্বোচ্চটি হলো- লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হা আর সর্বনিম্ন হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া এবং লজ্জাকারাও ঈমানের একটি অঙ্গ।” [মুসলিম]
ঈমানের রোকন ৬টি যথা- ১। আল্লাহর প্রতি, ২। তাঁর ফিরিস্তাগণ, ৩। কিতাবসমূহ, ৪। নবীরসূলগণ, ৫। শেষ দিবস বা আখিরাত, ৬। তাকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। এ সমস্ত রোকনের দলিল- আল্লাহর বাণীঃ
لَيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُو هَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّنَ وَءَاتَى ٱلۡمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِى ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِى ٱلرِّقَابِ ١٧٧ بقرة
“তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে করবে তাতে পুণ্য নেই, বরং পুণ্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফিরিস্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। ….” [সূরা বাকারা- ১৭৭]
إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩ قمر
“আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধরিত পরিমাপে।” [সূরা কামার- ৪৯]
হাদীসে জিবরীল [আঃ] থেকে- যখন তিনি নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে খবর দেন। রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেন, (ঈমান হচ্ছে) “আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, পরকাল, কিতাব, নবী-রসূগণ, শেষ দিবস ও তকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনবে।” [বুখারী ও মুসলিম]
আমাদের দেশে পুনরুত্থানকে একটি আলাদা রোকন বানিয়ে ঈমানের রোকন সাতটি বলা হয়ে থাকে। আসলে পুনরুত্থান শেষ দিবসের প্রতি ঈমানেরই অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মনে করেন ঈমানের ৬টি রোকন কি তার নাম জেনে নেওয়াই যথেষ্ট। এমন ধারণা করা টা মারাত্মক ভুল। বরং রোকনগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দাবি কি তা জানা প্রতিটি মুসলিমের প্রতি ওয়াজিব।
আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ নেফাক শব্দটির আভিধানিক অর্থ- মোনাফেকি, কপটতা ও দ্বিমুখিতা। ইসলামি পরিভাষায়- ভিতরে কুফুরি লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম প্রকাশ করা। মোনাফেক হলো- অন্তরের মাঝে কুফুরি গোপনকারী ও বাহিরে ইসলাম প্রকাশকারী।
তথা আকীদা (বিশ্বাসে) নেফাকি, একে বড় নেফাকি বলে। বড় মোনাফেক ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নামের অতল তলে। বড় মোনাফেক সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“তারা আল্লাহ এবং মুমিনদেরকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না কিন্তু তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তঃকরণ ব্যাধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আজাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।” [সূরা বাকারা- ৯-১০]
৬. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দ্বীনের বিজয়কে ঘৃণা করা।
কর্মে নেফাকি। একে ছোট নেফাকি বলে। ইহা অন্তরে ঈমান থাকার পরেও কাজে-কর্মে মোনাফিকের আমল করা। এ ধরনের নেফাকি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় না। তবে মোনাফিক হওয়ার জন্য এক মাধ্যম। মোনাফিকী বা বড় নেফাক ঈমানের সঙ্গে থাকে। আসলে অলসতার কারণে কর্মে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে অন্তর কুলশিত হয়ে ধিরে ধিরে ঈমান-হারা হয়ে যায়। তাই যখন ছোট নেফাকি প্রকট আকার ধারণ করে তখন বড় মোনাফিক হয়ে যায়।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا أَوْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْ أَرْبَعَةٍ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْ انِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَ إِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَ إِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ». متفق عليه.
(২) নেফাকি থেকে ভয়ঃ ইবনে আবি মুলাইকা (রহঃ) বলেন- আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর ৩০ সাহাবী (রাঃ)- এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি তাঁরা সকলেই নিজের উপর নেফাককে ভয় করতে। [বুখারী]
৪. বড় নেফাকির মোনাফিক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তওবা করে না। আর করলেও তার তাওবা কবুলের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু ছোট নেফাকির মোনাফিক তওবা করে ও আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।
কুফুরী শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ কুফুর শব্দটি আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ঢেকে দেওয়া গোপন করা বা অস্বীকার করা। আর ইসলামী পরিভাষায় কুফুরী হল- আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান না আনা এবং দ্বীনের কোন জিনিসকে অস্বীকার করা। ইহা ঈমানের বিপরীত কাজ। কাফির হল, আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণ বা দ্বীনের কোন কিছুকে অস্বীকার করা।
১। বড় কুফুরী, ২। ছোট কুফুরী
ইহা মানুষকে মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। ইহা আবার পাঁচ প্রকারঃ
“এটা এ জন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে।” [সূরা মুনাফিকূন- ৩]
এ কুফুরী কাজের দ্বারা সংঘটিত হয়। ছোট কুফুরী বলা হয় ঐ সকল পাপকে যা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে কুফুরী নামে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু বড় কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছায় না। যেমন- নেয়ামতের কুফুরী। ইহা মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় না।
“আর যদি মুমিনদের দু’টি দল কিতালে (যুদ্ধে) লিপ্ত হয় তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমন করলে আক্রমনকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফাইসালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন।” [সূরা হুজুরাত- ৯]
৪. বড় কুফুরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে মুমিনদের শত্রুতা করা জরুরী। তার সাথে মেলামেশা ও ভালবাসা করা হারাম, যদিও সে নিজ আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। কিন্তু ছোট কুফুরীতে এমনটা জরুরী না।
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করবে সে কুফুরী অথবা শিরক করল।” [তিরমিযী ও হাকেম]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।” [সূরা বাকারা ২ঃ১৭৮]
রিদ্দতের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ প্রত্যাবর্তন ও ফিরে যাওয়া। আল্লাহ বলেন:
يَٰقَوۡمِ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡأَرۡضَ ٱلۡمُقَدَّسَةَ ٱلَّتِي كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡ وَلَا تَرۡتَدُّواْ عَلَىٰٓ أَدۡبَارِكُمۡ فَتَنقَلِبُواْ خَٰسِرِينَ ٢١ مَائِدَة
“হে আমার সম্প্রদায়! এই পূণ্য ভূমিতে প্রবেশ কর যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন, আর পিছনের দিকে (কুফুরী ও মুশরিকী-তে) ফিরে যেও না, তাহলে তোমরা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে”। [সূরা মায়েদাঃ ২১]
ইসলামী পরিভাষায় রিদ্দত হলঃ ইসলাম গ্রহণের পর আবার কুফুরীতে ফিরে যাওয়া। মুরতাদঃ ইসলাম ত্যাগকারীকে মুরতাদ বলা হয়। আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن يَّرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَا لُهُمۡ فِى ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأَخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧ بَقَرَة
“তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হল জাহান্নামবাসী। তথায় তারা চিরকাল বাস করবে।” [সূরা বাকারা: ২১৭]
যেমন আল্লাহ কিংবা রসূল অথবা ফিরিস্তা বা কোন নবী-রসূলকে গালি-গালাজ করা। অথবা ইলমে গায়েব (কোন মাধ্যম ছাড়া অদৃশ্যের খবরাদী জানা দাবি করা বা মনে করা) কিংবা নবুয়াতী দাবি করা অথবা নুবুওয়াতের দাবিদারকে বিশ্বাস করা। এ ছাড়া আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকা ও তার নিকট যা সে করতে সক্ষম না তার সাহায্য এবং আশ্রয় কামনা করা।
যেমন মূর্তি, গাছ, পাথর ও কবর ইত্যাদিকে সিজদা করা এবং এগুলোর উদ্দেশ্যে পশু-পাখী জবাই বা মান্নত করা, কুরআনের অবমাননা করা, যাদু করা ও শিখা এবং শিখানো এবং আল্লাহর বিধান ছাড়া মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা করা বৈধ মনে করা ইত্যাদি।
যেমন আল্লাহর শরিক আছে বিশ্বাস করা, অথবা ব্যভিচার, মদ, জুয়া ও সুদ ইত্যাদি হারাম জিনিসকে হালাল মনে করা। এ ছাড়া কোন হালাল জিনিসকে হারাম মনে করা কিংবা স্বালাত ইত্যাদিকে ফরয মনে না করা।
যেমন শিরক, যেনা, হালাল বা হারাম জিনিস সম্পর্কে কিংবা নবী (সাঃ) বা কোন রসূলের রিসালাত বিষয়ে অথবা দ্বীন ইসলাম বা ইহা বর্তমান যুগে অনুপযোগী ইত্যাদি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।
Page 2