Page 3
“তাওহীদ” আরবী শব্দ যার অর্থ কোন কিছুকে একক সাব্যস্ত করা। তাই তাওহীদ শব্দ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, সৃষ্টি-রাজিতে একক বলে কোন জিনিস নেই। বরং প্রতিটি জিনিসের শরিক বা সদৃশ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَمِن كُلِّ شَىۡءٍ خَلَقۡنَا زَوۡجَيۡنِ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٤٩ ذَارِيَات
“আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।” [সূরা যারিয়াত:৪৯]
অতএব, আল্লাহ তা‘আলাকে যা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট তাতে একক সাব্যস্ত করাই তাওহীদ। যাকে এক কথায় আল্লাহর একত্ববাদ বলা হয়। তাওহীদ আল্লাহর অধিকার যা সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ফরজ।
তাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহর রবূবিয়্যাহতে (কর্তৃত্যে), আসমা ওয়াসস্বিফাতে (নাম ও গুনাবলীতে) এবং উলূহিয়্যাহতে (ইবাদত বা দাসত্বে) একক সাব্যস্ত করা।
১। তাওহীদুর রবূবিয়্যাহ। ২। তাওহীদুল আসমা ওয়াসস্বিফা-ত। ৩। তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ।
তাওহীদুর রবূবিয়্যাহ হল: আল্লাহর কাজে তাঁকে একক সাব্যস্ত করা। যেমন- প্রতিপালন, মালিকত্ব, রাজত্ব, সৃষ্টি করা, পরিচালনা ও সারা বিশ্বের মহা ব্যবস্থাপনা, আদেশ ও নিষেধ। অতএব, আল্লাহই একমাত্র সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক, তিনি রিজিক দাতা, হায়াত-মউতের মালিক, উপকার ও ক্ষতি তাঁরই হাতে তিনি বিধান দাতা ইত্যাদি।
তাওহীদের এ প্রকারটি মক্কার-কাফিররা আংশিক স্বীকার করলেও পুরাপুরি স্বীকার করত না। যেমন- তারা আল্লাহর অন্যান্য রবূবিয়্যাহ স্বীকার করলেও আল্লাহর দেওয়া সকল বিধি-বিধান মানত না। আল্লাহ যে রব তার বড় প্রমাণ তারা বিধি-বিধান। এই বিধি-বিধান মানার ক্ষেত্রে আজকেও সকল মুসলিম ও অমুসলিম একই পর্যায়ে রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ٱلۡأَعۡرَاف
“জেনে রাখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই আর বিধানের একমাত্র মালিক তিনিই, সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহ হলেন বারাকাতময়।” [সূরা ‘আরাফঃ ৫৪]
وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوۡمَئِذٖ يَخۡسَرُ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٢٧
“এবং আসমান জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্যই, যেদিন কিয়ামাত সংঘঠিত হবে সেদিন মিথ্যাশ্রয়ীরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা জাসিয়াঃ ২৭]
وَلَئِن سَأَلۡتُهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۚ قُلۡ أَفَرَءَيۡتُم مَّاتَدۡ عُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ إنۡ أَرَادَنِيَ ٱللَّهُ بِضُرٍّ هَلۡ هُنَّ كَٰشِفَٰتُ ضُرِّهِۦٓ أَوۡ أَرَدَنِي بِرَحۡمَةٍ هَلۡ هُنَّ مُمۡسِكَٰتُ رَحۡمَتِهِۦۚ … ٢٨ ٱلزُّمَرِ
“আপনি যদি তাদেরকে (কাফের-মুশরিকদের) জিজ্ঞাসা করেনঃ আকশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ। ….” [সূরা জুমারঃ ৩৮]
وَلَئِن سَأَلۡتُهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۚ
“আপনি যদি তাদেরকে (কাফের-মুশরিকদের) জিজ্ঞাসা করেনঃ আকশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ। ….” [সূরা লুকমানঃ ২৫]
ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ فَاتِحَةِ
“সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।” [সূরা ফাতিহাঃ ২]
ক) ‘আসমা- শব্দটি ‘ইসম‘ শব্দের বহুবচন যার অর্থ- নাম সমূহ। আল্লাহর অনেক উত্তম নাম রয়েছে। যেমন- আররহমান, আররাহীম, আলক্ব-হির, আলকুদদূস ইত্যাদি।
খ) ‘স্বিফা-ত‘ শব্দটি ‘স্বিফাহ্ শব্দের বহুবচন যার অর্থ: গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য। যেমন- রহমত মানে দয়া যা একটি গুণ, ‘উলূ অর্থ উর্ধ্বতা, নুজূল মানে অবতরণ, ইস্তিওয়া- অর্থ উপরে উঠা ও উর্ধ্বে থাকা, মুখমণ্ডল, হাত ইত্যাদি সবই আল্লাহর বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাব কুরআন কারীমে এবং নবী (সাঃ) তাঁর বিশুদ্ধ হাদীসে যে সকল আল্লাহর উত্তম নাম সমূহ, মহান গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোকে তাঁর মহিমা ও মর্যাদার জন্য যেমন উপযুক্ত তেমনি হুবহু সাব্যস্ত করা। আর যে সকল নাম সমূহ, গুণাবলী ও বৈশিষ্টকে অস্বীকার করেছেন সেগুলোকে অস্বীকার করা। ইহা কারো সাথে কোন প্রকার সদৃশ বা অর্থের পরিবর্তন ঘটানো কিংবা ইচ্ছামত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা অথবা অর্থ বিলুপ্ত করা ছাড়াই হতে হবে। এ ছাড়া কোন ধরণ ও আকৃতি ছাড়াই সাব্যস্ত করতে হবে।
(১) স্বিফাত যাতীয়্যাহ (স্বত্বীয় গুণাবলী) যে গুলো সর্বদা আল্লাহর সাথে মিলিত। যেমনঃ জ্ঞান, শক্তি, শুনা, দেখা, কথোপকথন ইত্যাদি। এর মধ্যে আবার কিছু আছে যেগুলো “স্বিফাত খাবারিয়্যাহ” তথা আল্লাহ তা‘আলা যেগুলো স্বিফাতের খবর দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহর চেহারা, তাঁর দু‘হাত ও তাঁর দু‘চোখ ইত্যাদি।
(২) স্বিফাত ফে‘লীয়্যাহ (কার্যের গুণাবলী) যেমনঃ দুনিয়ার আসমানে ‘নুজূল‘ তথা অবতরণ ইত্যাদি।
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ হলঃ বান্দার সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য করা। যেমন- দোয়া, জবাই, নজর-মান্নত, স্বালাত, কুরবানী, সিজদা, ইস্তিয়াযা, ইস্তিগাসা, ইস্তিলজা- ইত্যাদি। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদত করা শিরক, চাই কোন সম্মানিত ফিরিস্তা হোক বা কোন নবী- রসূল কিংবা অলি-বুজুর্গ হোক। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই সকল প্রকার ইবাদত করাই বান্দার প্রতি সবচেয়ে বড় ও সর্বপ্রথম ফরজ।
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّغُوتَۖ … ٣٦ نَحۡلِ
“আল্লাহর ইবাদত করবার ও তাগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা নাহলঃ ৩৬]
قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ إِخۡلَاصِ
“বলুন- তিনিই আল্লাহ একক।” [সূরা এখলাস]
رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَا فَٱعۡبُدۡهُ وَٱصۡطَبِرۡ لِعِبَٰدَتِهِۦۚ هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيّٗا ٢٥ مَرۡيَمَ
“তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার রব (পালনকর্তা)। সুতরাং তাঁরই ইবাদত করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন। আপনি তাঁর সমান কাউকে কি জানেন?” [সূরা মারইয়ামঃ ৬৫]
বান্দার জীবনে যতকিছু ঘটে, যা যেভাবে, যখন, যতটুকু, প্রয়োজন ও পছন্দ করে এবং যা পছন্দ করে না ও চায় না। এ সবকিছুর দেওয়া-নেওয়া এবং প্রতিহত করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। এতে কেউ কোন প্রকার শরিক না। চাই সে ফিরিস্তা হোক বা নবী-রসূল হোক কিংবা অলি-বুজুর্গ হোক। ইহাই হল তাওহীদুর রবূবিয়্যাহর মূল দাবি।
বান্দার যা প্রয়োজন তা দেওয়ার ও যা প্রয়োজন না তা প্রতিহত করার সর্বপ্রকার পরিপূর্ণ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত একমাত্র আল্লাহই। ইহাই হল তাওহীদুল আসমা ওয়াসস্বীফাতির মূল কথা।
অতএব, যখন বান্দার জীবনের সবকিছুর প্রয়োজন চূড়ান্ত ভাবে একমাত্র আল্লাহর হাতে এবং তা সম্পাদনের সব ধরনের সুমহান নাম সমূহ, মহৎ গুণাবলী ও প্রশংসনীয় বৈশিষ্টময় তিনিই, তখন বান্দার জীবনের সবকিছু করণীয়, বর্জনীয়, ভয়, ভক্তি, ভালবাসা যা ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য হওয়া উচিত। আর ইহাই হল তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর মূল দাবি।
শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- কোন কিছুর শরিক ও অংশীদার সাব্যস্ত করা। শিরক বলতে আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করাকেই বুঝায়।
আল্লাহর রবূবিয়্যাহ (কাজে), আসমা ওয়াস্স্বিফা-ত (নাম, গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে) এবং উলূহিয়্যাহতে (ইবাদতে) কাউকে শরিক সাব্যস্ত করাকে শিরক বলে।
শিরক আল্লাহর অধিকারের প্রতি নেতিবাচক বিশ্বাস। আর শিরক মহাপাপ, সবচেয়ে বড় অপবিত্র, বড় জুলুম। এ ছাড়া শিরক সমস্ত আমলকে বিনষ্টকারী, ইসলাম থেকে খারিজকারী, জানমাল হালালকারী, জান্নাত হারামকারী ও তওবা ছাড়া মারা গেলে অক্ষমাযোগ্য চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়ার পাপ।
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَادُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يُشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَيٰٓ إِسۡمًا عَظِيمًا ٤٧ نِسَاءِ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশীস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সূরা নিসাঃ ৪৮]
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মারা যাবে যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [বুখারী]
১। বড় শিরক, ২। ছোট শিরক।
যে শিরক করলে বা শিরকী আকিদা পোষণ করলে দ্বীন থেকে বেড় হয়ে যায়। তওয়বা না করে মৃত্যু বরণ করলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
রুজি অনুসন্ধানে বা রোগ নিরাময় কিংবা বিপদ মুক্তি ও কারো অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা প্রভৃতির উদ্দেশ্যে নবী-রসূল, অলি ইত্যাদি গাইরুল্লাহকে ডাকা শিরক।
আল্লাহ বলেনঃ
وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَالَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ يُنُوسَ
“আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবেন না, যে আপনার ভাল করবে না মন্দ করবে না। বস্তুত আপনি যদি এমন কাজ করেন, তাহলে তখন আপনিও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” [সূরা ইউনুসঃ ১০৬]
বিশুদ্ধ হাদীসঃ “যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [বুখারী]
যেমন, নবী-রসূল ও অলিগণকে গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা।
আল্লাহর বাণীঃ
وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَافِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَاتَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا فِي كِتَٰبِ مُّبِينِ ٥٩ أَنۡعَام
“অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তাঁরই হাতে রয়েছে, তিনি ছাড়া আর কেউই তা জ্ঞাত নয়। ….” [সূরা আন’আমঃ ৫৯]
আল্লাহর অনুরূপ কোন নবী-রসূল বা অলি-বুজুর্গকে ভালবাসা ও ভক্তি করা।
আল্লাহর বাণীঃ
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِلَّهِۗ وَلَوۡيَرَي ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِذۡ يَرَوۡنَ ٱلۡعَذَابَ أَنَّ ٱلۡقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعَا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعَذَابِ ١٦٥ بَقَرَة
“এবং মানুষের মধ্যে এরূপ আছে- যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে সদৃশ্য স্থির করে, আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তারা তাদেরকে ভালবেসে থাকে। …” [সূরা বাকারাঃ ১৬৫]
শরিয়ত পরিপন্থী কাজে উলামা-মাশায়েখ, ইমাম ও পীর-বুজুর্গদের আনুগত্য করা।
আল্লাহর বাণীঃ
ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّالِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّهُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١ تَوۡبَة
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে….” [সূরা তাওবাহঃ ৩১]
আল্লাহর রসূলের বিশুদ্ধ হাদীসঃ
আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) এ সম্পর্কিত কথা শুনে বলেন “আমরা তাদের ইবাদত করি না” রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “তাদের ইবাদত হচ্ছে অবাধ্যতার কাজে তাদের আনুগত্য করা।” নবী (সাঃ) আরো বলেনঃ “স্রষ্টার অবাধ্যচরণ করে কোন কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।” [আহমাদ ও তিরমিযী]
এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিতে আবির্ভূত। সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান। যেমন- সূফী সম্রাট ইবনে আরাবীর আক্বীদা। সে বলেছেঃ প্রভু তো দাস, আর দাস হল প্রভু, হায় যদি আমি জানতে পারতাম মুকাল্লাফ (শরীয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) কে।
যেমন- সুফীদের ধারণা যে, তাদের অলি বা কুতুবরা বিশ্ব-নিয়ন্ত্রণে আল্লাহকে সহযোগিতা করেন। যেমনঃ বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী ও অন্যান্যদের সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয়।
আল্লাহর বাণীঃ
يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ ٱسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ثُمَّ يَعۡرُجُ إِلَيۡهِ فِي يَوۡمٖ كَانَ مِقۡدَارُهُۥٓ أَلۡفَ سَنَةٖ مِّمَّا تَعُدُّونَ ٥ ٱلسَّجۡدَةِ
“তিনি আল্লাহ আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন …..।” [সূরা সিজদাহঃ ৫]
অনুপস্থিত অলি কিংবা জিনের প্রভাব ও অনিষ্ট করার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করা।
আল্লাহর বাণীঃ
أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِٱلَّذِينَ مِن دُونِهِۦۚ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَمَالَهُۥ مِنۡ هَادٖ ٣٦ ٱلزُّمَرِ
“আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্যে যথেষ্ট নন, অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়, …” [সূরা জুমারঃ ৩৬]
[নোটঃ তবে কোন হিংস্র জন্তু বা জালিম ব্যক্তিকে স্বভাবগতভাবে ভয় শিরকের পর্যায়ভুক্ত নয়।]
দ্বীন পরিপন্থী বিধান প্রণয়ন ও প্রচলন এবং তা বিশ্বাস এবং সন্তুষ্টচিত্তে বৈধ মনে করা বা ইসলামী সংবিধানকে অচল ভাবা।
আল্লাহর বাণীঃ
… وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُلَٰئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤ ٱلۡمَئِدَةِ
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত (বিধান) অনুযায়ী হুকুম না করে, তাহলে এমন লোক তো কাফির” [সূরা মায়েদাঃ ৪৪]
১) দর্গা বা কবরে (মাজারে) মৃত কবরবাসীদেরকে বিপদ মুক্তি বা রুজি, চাকুরি, বাচ্চা ইত্যাদি পাওয়ার জন্য ডাকা,
২) দর্গা বা কবরে (মাজারে) মৃত কবরবাসীর নামে নজর-মান্নত মানা, পশু জবাই করা,
৩) দর্গা বা কবরে (মাজারে) মৃত কবরবাসীর কবরে তওয়াফ বা পার্শে সেজদা করা,
৪) মানব রচিত সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা,
৫) কুরআন-সুন্নার পরিপন্থী ইমাম বা পীর-বুজুর্গদের মতের আনুগত্য করা ইত্যাদি।
প্রতিটি মাধ্যম ও কর্ম যা বড় শিরক পর্যন্ত পৌঁছায় এবং বিশ্বাসে, আকিদাতে ও ইবাদত পর্যায়ে পৌছায় না তাকে ছোট শিরক বলে। এ শিরক করলে দ্বীন থেকে বেড় হয়ে যায় না কিন্তু বড় গুনা হয়। এ কারনে আল্লাহ চাইলে তাকে জাহান্নামে কিছু দিন শাস্তি প্রদানের পর আবার জান্নাত প্রদান করবেন।
১। প্রকাশ্য শিকর, ২। গুপ্ত ও সুক্ষ্য শিরক।
১) প্রকাশ্য ছোট শিরক যা কথায় ও শব্দে হয়ে থাকে, ২) প্রকাশ্য ছোট শিরক যা কর্মে হয়ে থাকে।
যেমনঃ আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা।
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল সে কুফুরী ও শিরক করল।” [তিরমিযী, হাসান বলেছেন, হাকেম, সহীহ্ বলেছেন।]
“এভাবে মায়ের কসম, আগুনের কসম, বিদ্যার কসম, মাটির কসম, ছেলে-মেয়ের কসম, মসজিদের কসম, পীর-অলির কসম ইত্যাদি। এ সবই গাইরুল্লাহর কসম যা ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।” আর যদি মনে করা হয় যে, “অলি বা যার নামে কসম করছে, মিথ্যা শপথ করলে সে ক্ষতি করতে পারবে তাহলে বড় শিরক হয়ে যাবে।” অনুরূপভাবে “আল্লাহ এবং তোমার ইচ্ছায়, আল্লাহ ও ডাক্তার বা কবিরাজ কিংবা অলির জন্য বাচ্চাটি বেঁচে গেল ইত্যাদি ছোট শরক।” কেননা, এখানে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছাকে যোগ করা হয়েছে। “কিন্তু যদি আল্লাহ অতঃপর অমুক না থাকলে বা আল্লাহর এরপর অমুক তাহলে আমার এই হত এভাবে বলা বৈধ।” কারণ এখনে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছাকে মিলয়ে দেওয়া হয়নি বরং আল্লাহর ইচ্ছার অধীন করা হয়েছে।
যেমন বিভিন্ন বালা ও সুতা প্রভৃতি বালা-মসিবত দূর করা অথবা প্রতিহত করার জন্য ব্যবহার করা। অনুরূপভাবে বদনজর ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ-কবজ বাঁধা। যদি বিশ্বাস রাখে যে, এসব বালা-মসিবত দূর অথবা প্রতিহত করার একটি কারণ মাত্র, তাহলে ছোট শিরক । কেনানা, আল্লাহ এসবকে কারণ হিসাবে স্বীকৃতি দেননি। আর যদি মনে করে যে, এসব বালা-মুসিবত প্রতিহত বা দূর করে, তাহলে বড় শিরক। কেননা, আল্লাহ এসবকে কারণ হিসাবে স্বীকৃতি দেননি। কেননা, এ দ্বারা গাইরুল্লাহর সাথে সম্পর্ক জুড়া হয়।
ইহা রাত্রির আঁধারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়ার পদধ্বনির চেয়েও গুপ্ত ও সূক্ষ্ম। এ শিরক নিয়ত ও ইচ্ছার মধ্যে হয়ে থাকে। কোন সৎকর্ম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ বা নাম হাসিলের জন্য সুন্দররূপে সুশোভিত করা। যেমন- কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে কিন্তু লোকের সামনে তাদের প্রশংসা লুটার জন্য অতি সুন্দরভাবে আদায় করে।
রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আমি তোমাদের যা অধিক ভয় করি তা হচ্ছে ছোট শিরক।” সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ছোট শিরক কি? তিনি বললেন: “রিয়া তথা লোক দেখানো আমল।” [আহমাদ, তাবারানী ও বাগাভী, শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন।]
অনুরূপভাবে দুনিয়া হাসিলের জন্য যে কোন সৎকর্ম যেমন: হজ্জ্ব, আজান, ইমামতি, দান-খয়রাত, দ্বীন জ্ঞানার্জন, দ্বীন কায়েমের কাজ, দা‘ওয়াত-তাবলীগ ও জিহাদ ইত্যাদি পার্থিব্য কোন উদ্দেশ্যে সম্পদান করা ছোট শিরক।
এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।
اَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُبِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَّأَنَّا أَعْلَمْ , وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمْ
“হে আল্লাহ! আমি জেনে বুঝে তোমার সাথে যে শিরক করি তা হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং যা না জেনে শিরক করি তা হতেও তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি।” [হাদীসটি সহীহ, আলবানীর সহীহুল জামে’ , হাদীস: ৩৭৩১]
প্রতিদিন ঘুমানোর সময় সূরা কাফিরূন পড়া। [হাদীসটি হাসান, আলবানীর সহীহুল জামে’ , হাদীস নং- ২৯২]
قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَفِرُونَ ١ لَآ أَعۡبُدُ مَاتَعۡبُدُونَ ٢ وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ ٣ وَلَآ أَنَاْ عَابِدٞ مَّاعَبَد تُّمۡ ٤ وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ ٥ لَكُمۡ دِينُكُمۡ وَلِيَ دِينِ ٦ ٱلكَافِرُونَ
“বলুন, হে কাফিরকুল, আমি ইবাদত করি না তোমরা যার ইবাদত কর। আর তোমরাও ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি এবং আমি ইবাদতকারী নই যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে” [সূরা কাফিরূন- ১-৬]
তরীকা, পথ ও আদর্শ, চাই তা প্রশংসিত পন্থা হোক অথবা ঘৃণিত হোক।
কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত নবী (সাঃ) এর পন্থা ও আদর্শ। চাই তা আকীদা হোক বা আমল। এ ছাড়া সাহাবা কেরাম (রাঃ) এর আকীদা ও আমলও এর আন্তর্ভুক্ত। নবী (সাঃ) বলেনঃ
أُوصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّهِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
“আমি তোমাদেরকে আসিয়াত করছি যে, তোমরা আল্লাহর ভয় রাখবে এবং দায়িত্বশীলদের কথা শুনবে ও আনুগত্য করবে যদিও সে আবিসিনীয়ার (কালো) দাস হয় । স্মরণ রাখবে! তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা দেখতে পাবে অনেক মতানৈক্য। সে সময় তোমাদের প্রতি জরুরী হলো আমার সুন্নত ও হেদায়তপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত কর্তন দাঁত দ্বারা তাকে মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধরবে।” [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ]
ইহা নবী (সাঃ) এর বাণীঃ “প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভর করে।” [বুখারী ও মুসলিম]
ইহা নবী (সাঃ) এর কর্ম। যেমনঃ “সলাত আদায়ের পদ্ধতি, হজ্বের পদ্ধতি ইত্যাদি।” [হাদীস গ্রন্থ সমূহ]
ইহা নবী (সাঃ) এর সমর্থন। যেমনঃ “ফজরের সালাতের পর একজন মানুষ ফজরের সুন্নত পড়লে নবী (সাঃ) দেখার পর তা সমর্থন করেন।” [সহীহ আবু দাঊদ]
স্মরণ রাখতে হবে যে, নবী (সাঃ) এর নবুয়াত ও রেসালাতের ২৩ বছরের সমস্ত জীবনের সবকিছুই সুন্নত তথা আদর্শ। চাই তা ফরজ-ওয়াজিব ও মুস্তাহাব বিষয়ের করণীয় সুন্নাত হোক বা হারাম ও মাকরুহ বিষয়ের বর্জনীয় সুন্নাত হোক।
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেনঃ “সুন্নাত হলো নূহ (আঃ) এর কিস্তীর মত। যে এ কিস্তীতে উঠবে সে নাজাত পাবে আর যে উঠবে না সে নিশ্চিত ধ্বংস হবে।”
ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রহঃ) বলেনঃ “নবী (সাঃ) এর হাউজে কাউছার দুইটি। একটি দুনিয়াতে আর আপরটি হল আখেরাতে। দুনিয়ার হাউজে কাউছার হল নবীর সুন্নাত। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সর্বদা সুন্নাতের হাউজে কাউছার হতে পানি পান করবে সেই আখেরাতের হাউজে কাউছারের পানি পান করার সুযোগ পাবে।”
নবী (সাঃ) এর আনুগত্য করা ফরজ। আর একচ্ছত্রভাবে তাঁর আনুগত্যই হলো তাঁকে ভালবাসার পন্থা। এ ব্যাপারে কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ:) বলেনঃ “আমি সমস্ত কুরআনে দৃষ্টি ফিরায়ে ৩৩টি জায়গাতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যের নির্দেশ পেয়ছি।” [আল-ইবানা-ইবনে বাত্তাহঃ ১/২৬০]
ইমাম আজুরী (রহঃ) বলেনঃ “অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের ত্রিশের অধিক স্থানে সৃষ্টির প্রতি তাঁর রসূলের আনুগত্য করাকে ফরজ করে দিয়েছেন।” [আশ-শারীয়াহ-আজুরীঃ সহীফাঃ ৪৯] [মাজমু’উল ফাতাওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ ১৯/৯৩]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেনঃ “আর আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের প্রায় ৪০টি স্থানে প্রতিটি মানুষের প্রতি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যকে ফরজ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া নবীর আনুগত্য আল্লারই আনুগত্য বলে উল্লেখ করেছেন।” [মাজমু’উল ফাতোয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ ১৯/৮৩-২৬১] তিনি আরো বলেনঃ “আর সর্বপ্রকার কল্যাণ ও হেদায়াত রয়েছে নবী (সাঃ) এর আনুগত্যে এবং পথভ্রষ্টতা ও অকল্যাণ হল তাঁর বিপরীত করাতে।”
আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর।
يَٰٓأَيُّهَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّهُ إِلَي ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأْوِيلًا ٥٩ ٱلنِّسَاءِ
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর (দ্বীনি আলেম ও ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠী) তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রতি প্রত্যার্পণ কর যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম” [সূরা নিসাঃ ৫৯]
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পুস্কারের ওয়াদা। এ ছাড়া তার পরিণাম সুন্দর এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ।
تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ٱلنِّسَاءِ
“এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখনে চিরকাল থকবে। এ হল বিরাট সাফল্য” [সূরা নিসাঃ ১৩]
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানি করে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিন্দা ও শাস্তি। এ ছাড়া তাদের পরিণাম মন্দ এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম লাভ।
وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ ٱلنِّسَاءِ
“যে কেউ আল্লাহ ও তার রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি” [সূরা নিসাঃ ১৪]
নবী (সাঃ)-এর অনেক বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর আনুগত্যের জোর তাকিদ করেছেন। যেমন- নবী (সাঃ) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে অস্বীকারকারী ব্যতিরেকে সকলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন- অস্বীকারকারী কে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলেন: “যে আমার আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার নফরমানি করে সেই অস্বীকারকারী।” [বুখারী হাঃ ৭২৮০]
মনে রাখতে হবে, যে কোন আমল কবুল হওয়ার জন্য তিনটি বিশেষ শর্ত রয়েছে। (এক) আমাল সঠিক ঈমানের ভিত্তিতে হওয়া। (দুই) এখলাস তথা আমল শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া। (তিন) আমল কেবলমাত্র নবী (সাঃ) এর বিশুদ্ধ সুন্নতী পন্থায় হওয়া। আর ইহাই হচ্ছে ইসলামের প্রথম রোকনের দ্বিতীয়াংশের সাক্ষ্য প্রদানের দাবী। এ ছাড়া নবী (সাঃ) এর সুন্নত সম্মত হওয়ার জন্য তার মধ্যে বিশেষ ছয়টি বৈশিষ্ট্য অবশ্যই কুরআন ও সহীহ (বিশুদ্ধ) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।
১। ইবাদতের “সাবাব” তথা কারণ সুন্নত সম্মত হতে হবে। অতএব, শবে মেরাজ ও শবে বরাতের রাতে সালাত আদায় ও দিনে রোজা রাখার কারণ সুন্নত সম্মত না হওয়ায় এসব বিদাত।
২। ইবাদতের “জিনস” তথা প্রকার ও জাত সহীহ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। সুতরাং হরিণ ইত্যাদি দ্বারা কুরবানি জায়েজ নয়। কারণ, ইহা সহীহ সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত না।
৩। ইবাদতে “কাদার” তথা সংখ্যা ও পরিমাণ সহীহ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। তাই মাগরিব ও ইশা সালাতের মাঝে ৬ রাকাত আওয়াবীনের সালাত আদায় করা বিদাত। কারণ ইহা বিশুদ্ধ সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত না।
৪। ইবাদতের “কাইফিয়্যাহ্” তথা পদ্ধতি ও ধরণ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। অতএব, রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি যৌথকণ্ঠে দরুদ ও সালাম পাঠ করা বিদাত। কারণ এ পদ্ধতি সহীহ সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত নয়।
৫। ইবাদতে “জামান” তথা সময় সহীহ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। তাই যদি কেউ ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানি করে, তাহলে তার কুরবানি কবুল হবে না। কারণ ইহা সুন্নত সম্মত সময় নয়।
৬। ইবাদতের “মাকান” তথা স্থান সহীহ সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। যেমন: তিনটি মসজদের (মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা) ব্যতিরেকে কেউ যদি অন্য কোথাও সওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করে, তাহলে তা বিদাত। কারণ এসব মসজিদ ছাড়া সকল স্থান সুন্নত সম্মত জিয়ারতের স্থান নয়। অতএব, কোন ইবাদতে উল্লেখিত বৈশিষ্ঠগুলোর কোন একটি বা একাধিক অনুপস্থিত থাকলে তা আল্লাহর ইবাদত বলে গণ্য হবে না। বরং শিরয়তে সেটিকে বিদাত বলে আখ্যায়িত করা হবে।
ফিতনায় পতিত হওয়া। [সূরা নূরঃ ৬৩]
বিভিন্ন সংশয় ও মুতাশাবিহাত (রূপক) আয়াতের নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা।
Page 3