Dawah wa Tablig Islamic Website

Help Line = Mob no. +8801783385346 :: Email Address = shalampb@gmail.com || To see the Arabic (Saudi Print) correctly use "Mozilla Firefox" Browser.

Page 2

Tin Mul Nity, Page- 2


তৃতীয় মূলনীতি

তোমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জানা।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ পরিচয়- তাঁর নাম মুহাম্মদ, তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ, তাঁর পিতা আব্দুল মুত্তালিব, তাঁর পিতা হাশেম এবং হাশেম কুরাইশ বংশ উদ্ভূত, কুরাইশ আরব জাতির আন্তর্ভুক্ত এবং আরবরা হল ইবারাহীম বিন ইসামঈল খালিল এর বংশধর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি এবং আমাদের প্রিয় নবীর প্রতি উত্তম সালাত ও ছালাম নাযিল করুন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেষট্টি বছর জীবিত ছিলেন, তন্মধ্যে চল্লিশ বছর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে এবং তেইশ বছর রিসালাত ও নবুওয়াত প্রাপ্তির পর জীবিত ছিলেন। ٱقۡرَأ بِٱسۡمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ এই সূরাটি নাযিলের মাধ্যমে নবী এবং يَا أَيُّهَا لْمُدَّثِّرُ নাযিলের মাধ্যমে রাসূল হিসাবে নিযুক্ত ও সম্মানিত হন। তিনি মক্কা নগরে জন্ম গ্রহণ করেন, আল্লাহ তাঁকে শিরক থেকে সতর্কীকরণ এবং তাওহীদ বা একত্ববাদের দিকে আহবানের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। এর প্রমাণে আল্লাহ তা আলার বাণীঃ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُنۡ تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ ٧ سُورَةُ ٱلۡمُدَّثِّرِ

অর্থ- “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠ সতর্কবাণী প্রচার কর, এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ, আপবিত্রতা থেকে দূরে থাক, অধিক পাওয়ার আশায় দান কর না। এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ কর।” [সূরা মুদ্দাস্সির ১-৭]

আয়াতের শাব্দিক ব্যাখ্যাঃ

“উঠ, সতর্ক বাণী প্রচার কর” এর মাধ্যমে তাঁকে শিরক থেকে সতর্ক এবং তাওহীদের দিকে আহবান করতে বলা হয়েছে। وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ “এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর” এর মাধ্যমে তাওহীদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কথা প্রতিফলিত হয়েছে। وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ “তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ” অর্থাৎ তোমার আমল সমূহকে শিরক থেকে পবিত্র রাখ। وَٱلرُّجۡزَ فَاهۡجُرۡ “অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক” অপবিত্রতার অর্থ হল মূর্তিপূজা। বাক্যটি হবে- মূর্তিপূজা থেকে দূরে থাক, এবং মূর্তিপূজকদের পরিত্যাগ কর এবং মূর্তিপূজা এবং এর অনুসারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর। নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দশ বছর পর্যন্ত তিনি তাওহীদের দিকে (মানুষকে) আহবান করেন এবং দশ বছর পর তাঁকে মিরাজের উদ্দেশ্যে আকাশে আরোহণ করানো হয় এবং তাঁর প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। তিনি মক্কায় তিন বছর সালাত আদায় করেন, এর পর মদীনায় হিজরতের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। হিজরতের অর্থ হল শিরকের দেশ থেকে ইসলামী দেশে স্থানান্তরিত হওয়া।

[ফুটনোটঃ ১। বাহ্যিক অর্থাৎ শারীরিক, পোষাক পরিচ্ছদ, স্থান ইত্যাদি এর অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখা এবং আত্মিক তথা শিরকই আকিদা ও বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা]

এই মুসলিম উম্মাতের প্রতি মুশরিকদের দেশ থেকে ইসলামী দেশে হিজরত করা ফরয এবং [প্রয়োজনে] তা কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّ ٱلَّذِينَ تَوَفَّٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ ظَالِمِيٓ أَنفُسِهِمۡ قَالُواْ فِيمَ كُنتُمۡۖ قَالُواْ كُنَّا مُسۡتَضۡعَفِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ قَالُوٓاْ أَلَمۡ تَكُنۡ أَرۡضُ ٱللَّهِ وَٰسِعَةٗ فَتُهَاجِرُواْ فِيهَاۚ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ٩٧ إِلَّا ٱلۡمُسۡتَضۡعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وٱلنِّسَآءِ وَٱلۡوِلۡدَٰنِ لَا يَسۡتَطِيعُونَ حِيلَةٗ وَلَا يَهۡتَدُونَ سَبِيلٗا ٩٨ فَأُوْلَٰٓئِكَ عَسَى ٱللَّهُ أَن يَعۡفُوَ عَنۡهُمۡ وَكَانَ ٱللَّهُ عَفُوًّا غَفُورٗا ٩٩ سُورَةُ ٱلنِّسَاءِ

অর্থ- “নিশ্চয়ই যারা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করেছিল, মালাইকা তাদের প্রাণ হরণ করে বলবে- তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলবে- আমরা দুনিয়ায় অসহায় অবস্থায় ছিলাম; তারা বলবে আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তন্মধ্যে তোমরা হিজরত করতে? অতএব ওদের বাসস্থান জাহান্নাম এবং ওটা খুব নিকৃষ্ট গন্তব্য স্থান, নারী এবং শিশুদের মধ্যে অসহায়বশত- যারা কোন উপায় করতে পারে না অথবা কোন পথ প্রাপ্ত হয় না। ফলত- তাদেরই আশা আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ মার্জনাকারী ক্ষমাশীল” [সূরা নিসা- ৯৭-৯৯]

আল্লাহ তা‘আলার আরও বাণীঃ

يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ أَرۡضِي وَٰسِعَةٞ فَإِيَّٰيَ فَٱعۡبُدُونِ ٥٦ سُورَةُ ٱلعَنكَبُوتِ

অর্থ- “হে আমার মুমিন বান্দারা! আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।” [সূরা আনকাবূত- ৫৬]

মুফাস্সির আল বাগাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এ আয়াতটি সেই সমস্ত মুসলমানের উদ্দেশ্যে নাযিল হয় যারা হিজরত না করে মক্কায় অবস্থান করেন। আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তাদেরকে ঈমানদার বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্যাখ্যাঃ [হাদীসটি মানাবী তার “কুনূযুল হাকায়েক” নামক কিতাবে ইবনে আছাকের পর্যন্ত নিম্নের শব্দে সনদ উল্লেখ করেছেন। لا تنقطع الهجرة ما دام العدو يقاتل অর্থ- “যতক্ষণ পর্যন্ত শত্রু লড়াই করবে ততক্ষণ পর্যন্ত হিজরত বন্ধ হবে না।” এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের স্বীয় মুসনাদে নিম্নের শব্দে সনদে উল্লেখ করেছেন। لا تنقطع الهجرة ما قوتل الكفار অর্থ- “যতদিন পর্যন্ত কাফেরদের সাথে লড়াই চলবে ততদিন পর্যন্ত হিজরত বন্ধ হবে না।” অর্থাৎ তাদের স্বর ও কন্ঠ তীব্র হবে এবং তাদের সংগ্রাম শক্তিশালী হবে।]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদীনায় স্থায়ী হওয়ার পর ইসলামের অবশিষ্ট বিধান পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়। যেমন- যাকাত, রোযা, হজ্জ, আযান, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ সহ ইসলামের অন্যান্য বিধান সমূহ। তিনি এই অবস্থায় দশ বছর অতিবাহিত করেন। এবং এর পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি নাযিল হউক। তাঁর মৃত্যুর পর আজও তাঁর দ্বীন স্থায়ী আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা থাকবে। আমরা যে ধর্ম পালন করছি এটিই হলো তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীন। তিনি মুসলিম উম্মাতকে যাবতীয় সৎকর্ম সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং সমস্ত মন্দ ও ক্ষতিকারক কাজ থেকে সাবধান করেছেন। সর্বোত্তম কল্যাণের প্রতি তিনি যে নির্দেশ করেছেন তা হল তাওহীদ এবং এ সমস্ত কাজ করাকে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ভালবাসেন ও পছন্দ করেন। এবং যে মন্দ থেকে সাবধান করেছেন তা হল শিরক এবং এ সমস্ত কাজকে আল্লাহ অপছন্দ ও ঘৃণা করেন। আল্লাহ সুবাহানাহু তা‘আলা তাঁকে দুনিয়ার সকল মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করাকে সমস্ত জ্বিন ও ইনসানের প্রতি ফরয বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا … ١٥٨ سُورَةُ ٱلأَعۡرَافِ

অর্থ- “(হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) তুমি ঘোষণা করে দাও- হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।” [সূরা ‘আরাফ- ১৫৮]

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করার মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। এর প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ … ٣ سُورَةُ ٱلۡمَائِدَةِ

অর্থ- “আজকের দিনে তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম।” [সূরা আল মায়েদাহ- ৩]

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুনিয়া থেকে মৃত্যু বরণ করা সম্পর্কে” এর প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عِنۡدَ رَبِّكُمۡ تَخۡتَصِمُونَ ٣١ سُورَةُ ٱلزُّمَرِ

অর্থ- “(হে রাসূল!) তুমি তো মরণশীল এবং তারাও (অন্যান্য রাসূলগণও) মরণশীল। অতঃপর কিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বাক বিতণ্ডা করবে।” [সূরা যুমার ৩০-৩১]

মানুষ যখন মারা যাবে তখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

* مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَ فِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَ مِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً أُخۡرَىٰ ٥٥ سُورَةُ طه

অর্থ- “আমি মৃত্তিকা হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং তা হতে পুনর্বার বের করবো।” [সূরা ত্বাহা- ৫৫]

আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

وَٱللَّهُ أَنۢبَتَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ نَبَاتٗا ١٧ ثُمَّ يُعِيدُكُمۡ فِيهَا وَيُخۡرِجُكُمۡ إِخۡرَاجٗا ١٨ سُورَةُ نُوحٍ

অর্থ- “আল্লাহ তোমাদেরকে উদ্ভূত করেছেন মাটি হতে, অতঃপর তাতে তিনি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন ও পরে তা হতে তোমাদের কে বাহির করবেন।” [সূরা নূহ- ১৮]

পুনরুত্থিত করার পর মানুষের হিসাব নিকাশ গ্রহণ করা হবে এবং তাদের আমল অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

وَلِلَّهِ مَافِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَسَٰٓئُواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيَجۡزِيَ الَّذِينَ أَحۡسَنُواْ بِٱلۡحُسۡنَى ٣١ سُورَةُ ٱلنَّجۡمِ

অর্থ- “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে তিনি মন্দ প্রতিফল দেন এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন।” [সূরা নজম- ৩১]

যারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তারা কাফির। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧ سُورَةُ ٱلتَّغَابُنِ

অর্থ- “কাফিররা ধারণা করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদেরকে সে সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর প্রতি অতি সহজ।” [সূরা তাগাবুন- ৭]

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা এবং সর্তকারী করে পাঠিয়েছেন। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ

رَّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنۡذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٦٥ سُورَةُ ٱلنِّسَاءِ

অর্থ- “আমি রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে লোকদের মধ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে কোন বিরোধ না থাকে এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী।” [সূরা নিসা- ১৬৫]

তাদের প্রথম রাসূল হলেন নূহ ‘আলাইহিস্সাল্লাম। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّنَ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ … ١٦٣ سُورَةُ ٱلنِّسَاءِ

অর্থ- “(হে রাসূল!) নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি, যেরূপ আমি নূহ ‘আলাইহিস্সাল্লাম ও তৎপরবর্তী নবীগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম।” [সূরা আন নিসা- ১৬৩]

আল্লাহ সুবাহানাহু তা‘আলা নূহ ‘আলাইহিস্সাল্লাম থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলিহিস্সাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক উম্মাতের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা তাদের উম্মতকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার হুকুম দিতেন এবং তাদের উম্মতকে তাগুতের ইবাদত করা থেকে নিষেধ করতেন। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

وَلَقَدۡ بَعَثۡنَافِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّغُوتَۖ … ٣٦ سُورَةُ ٱلنَّحۡلِ

অর্থ- “আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা নাহাল- ৩৬]

আল্লাহ সুবাহানাহু তা‘আলা সমস্ত আদম সন্তানের উপর যে জিনিসটি ফরয করে দিয়েছেন, তা হল তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।

ইবনুল কাইয়েম (রাহিমাহুল্লাহ) তাগুতের তা’রিফে বলেছেনঃ

তাগুত এর অর্থ হলঃ

বান্দা তার সীমালঙ্ঘন করাকে বলা হয়। এবং এই সীমালঙ্ঘন আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় এমন ব্যক্তি হতে পারে অথবা অনুসৃত ব্যক্তিও হতে পারে কিংবা যার আনুগত্য করা হয় এমন মান্যবর ব্যক্তিও হতে পারে।

প্রধান পাঁচটি তাগুতঃ

তাগুত অনেক রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে পাঁচটি।

০১। ইবলীস শয়তান, আল্লাহ তার প্রতি লা‘নত করুন।

০২। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয় এবং উক্ত উপাস্য ঐ ইবাদতে সন্তুষ্ট।

০৩। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার নিজের ইবাদত করার জন্য মানুষকে আহবান করে।

০৪। যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে ‘ইলমে গায়েবের (গুপ্ত জ্ঞানের) দাবি করে।

০৫। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করে।

তাগুতকে অস্বীকার এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّ فَمَن يَّكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦ سُورَةُ ٱلۡبَقَرَةِ

অর্থ- “ধর্ম সম্বন্ধে বল প্রয়োগ নেই; নিশ্চয়ই ভ্রান্ত হতে সুপথ প্রকাশিত হয়েছে; অতএব যে ব্যক্তি শয়তানকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে দৃঢ়তর রুজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধরলো যা কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়। এবং আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।” [সূরা বাকারাহ- ২৫৬]

আর এটিই হচ্ছে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” এর শাব্দিক অর্থ ও তাৎপর্য।

হাদীস থেকে এর প্রমাণঃ

((رَأْسٌ الْأَمْرِ اَلْإِسْلَامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ، وَذَرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ))

অর্থ- “কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে সালাত যার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বা সংগ্রাম করা।”

আল্লাহই সর্বাধিক অবহিত। (এর মাধ্যমেই তিনটি মূলনীতির আলোচনা শেষ হল এবং এর পরবর্তীতে সালাতের শর্ত সমূহের প্রতি আলোচনা আসবে। সালাতের মোট শর্ত ৯ টি।)


সালাতের শর্তসমূহ

সালাতের শর্তাবলী মোট ৯ টিঃ

১। ইসলাম-মুসলমান হওয়া, ২। বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া।, ৩। ভাল-মন্দ যাছাই করার জ্ঞান, ৪। ওযু করা, ৫। নাজাসাত বা অপরিচ্ছন্নতা দূর করা, ৬। লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা, ৭। সালাতের ওয়াক্ত হাজির হওয়া, ৮। কিবলা মুখী হওয়া, ৯। (অন্তরে) নিয়ত করা।

প্রথম শর্তঃ ইসলাম-মুসলমান হওয়া

ইসলাম এবং ইসলামের বিপরীত হল কুফরি বা অবিশ্বাস। এবং কাফেরের আমল পরিত্যাজ্য সে যে কোন আমল করুক না কেন তার কোন আমলই গ্রহণ হবে না। এর প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِينَ أَن يَعۡمُرُواْ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ شَٰهِدِينَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ بِٱلۡكُفۡرِۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ وَفِي ٱلنَّارِ هُمۡ خَٰلِدُونَ ١٧ سُورَةُ ٱلتَّوۡبَةِ

অর্থ- “মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরী স্বীকার করে তখন তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে এমন হতে পারে না। তারা এমন যাদের সমস্ত আমল ব্যর্থ এবং তারা জাহান্নামে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।” [সূরা তাওবাহ- ১৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরও এরশাদ করেনঃ

وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَاعَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنُثُورًا ٢٣ سُورَةُ ٱلفُرۡقَانِ

অর্থঃ “এবং আমি তোমাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করবো।” [সূরা ফুরকান- ২৩]

দ্বিতীয় শর্তঃ বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া।

আকল বা বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া এবং এর বিপরীত হল পাগলামি বা উন্মত্ততা। পাগল তার জ্ঞান ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তার উপর কোন গুনাহ লেখা হয় না। এর প্রমাণে, হাদীসঃ

((رُفِعَ الْكَلَامُ عَن ثَلَاثَةٍ: النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقَظَ وَالْمَجْنُونِ حَتَّى يُفِيقَ وَالصَّغِيرِ حَتَّى يَبْلُغَ))

অর্থ- “তিন ব্যক্তির গুনাহ লেখা হয় না। ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত না জাগবে এবং পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান তার ফিরে না আসবে আর ছোট শিশু যতক্ষণ না সে সাবালক হয়।”

[ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় মুসনাদে এবং আবূদাউদ, নাসায়ী এবং ইবনে মাজহও বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকীম তাঁর মুসতাদরাকে প্রায় একই শব্দে প্রথম খণ্ড ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। এবং মন্তব্য করেছে যে এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ তবে তারা উভয়ই তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নাই। আল হাফিজ যাহাবী ইমাম হাকেমের মন্তব্যকে সঠিক বলেছেন।]

তৃতীয় শর্তঃ ভাল-মন্দ যাছাই করার জ্ঞান থাকা।

ভাল-মন্দ যাছাই করার জ্ঞান, এর বিপরীত হল ছোট ও বাল্যকাল আর বাল্যকালের সময় সীমা সাত বছর, এর পর সালাত পড়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে হবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ

((مُرُوا أَبْنَاءَكُمْ بِالصَّلَاةِ لِسَبْعٍ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا لِعَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمُ الْمَضَاجِعَ))

অর্থ- “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ৭ বাছর বয়স থেকে সালাতের জন্য আদেশ কর এবং ১০ বছর বয়সে তাদেরকে প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক করে দাও।”

[হাদীসটি ইমাম হাকীম এর প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৮ কাছাকাছি শব্দেই উল্লেখ করেছেন। এবং ইমাম যাহাবী সহীহ বলে স্বীকার করেছেন। ইমাম আহমাদ মুসনাদে এবং আবূদাউদ স্বীয় সুনানে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।]

চতুর্থ শর্তঃ

নাজাসাত বা অপবিত্রতা দূর করা, যা ওযু করা নামে পরিচিত। অপবিত্রতা ওযুকে অপরিহার্য করে দেয়। ওযুর শর্ত সমূহ ১০ টিঃ

০১। ইসলাম গ্রহণ করা বা মুসলমান হওয়া, ০২। বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া, ০৩। ভাল-মন্দ যাছাই করার জ্ঞান ০৪। অন্তরে নিয়ত করা, ০৫। ওযু শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়্যতকে বজায় রাখা, ০৬। ওযু ওয়াজিব করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা, ০৭। ওযুর পূর্বে ইস্তেনজা বা ঢিলা- কুলুখ ব্যবহার করা, ০৮। পানির পবিত্রতা এবং তা ব্যবহারের অনুমোতি ও বৈধতা থাকা, ০৯। চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে এমন বস্তুকে দূর করা, ১০। যে ব্যাক্তির সর্বদা ওযু ভঙ্গ হয়, তার ফরয সালাতের জন্য সালাতে সময় উপস্থিত হওয়া।

ওযুর ফরয ৬টিঃ

০১। পূর্ণ চেহারা ধৌত করা, কুল্লি করা ও নাকের মধ্যে পানি দিয়ে ঝারা এরই অন্তর্ভুক্ত। মুখমণ্ডলের সীমা-দৈর্ঘে হল মাথার চুলের উৎপাদনস্থল হতে চিবুক ও থুতনি পর্যন্ত এবং প্রস্থে উভয় কানের লতি পর্যন্ত, ০২। উভয় হাত কুনুই পর্যন্ত ধৌত করা, ০৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা এবং উভয় কান মাথা মাসহে করার অন্তর্ভুত, ০৪। পায়ের গ্রন্থি (পায়ের গোড়ালির উপরস্থিত পায়ের গিঁট) সহ উভয় পা ধৌত করা, ০৫। ক্রমানুসার বজায়, ০৬। ধারাবাহিকতা ও চলমানতা বজায় রাখা।

১-৪ নম্বরে বর্ণিত ওযুর ফরয সমূহের প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَيٰ ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ إِلَي ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَي ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ … ٦ سُورَةُ ٱلۡمَائِدَةِ

অর্থ- “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মসেহ কর এবং পা গুলোকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল।” [সূরা মায়েদা- ৬]

৫ নং বর্ণিত ক্রমানুসার বজায় রাখার প্রমাণে হাদীসঃ

((إِبْدَأُوا بِمَا بَدَأَللَّهُ بِهِ))

অর্থ- “তোমরা সে ভাবে আরম্ভ কর যার দ্বারা আল্লাহ আরম্ভ করেছেন।”

[ব্যাখ্যাঃ নাসায়ী স্বীয় সুনানুল কাবিরে হাদীসটি এই শব্দে বর্ণনা করেছেন। এবং ইবনে হাযেম মুহাল্লায় হাদীসটি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।]

৬ নং বর্ণিত ধারাবাহিকতা ও চলমানতার প্রমাণঃ

((أَن النبي صلى اللَّه عليه و صلم رأي رجلا في قدمه لمعة قدر الدرهم لم يصها الماء فأمره بالإعادة))

অর্থ- “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার ওযু করার পর, তার পায়ে এক দিরহাম পরিমাণ চকচকে শুষ্ক জায়গা দেখতে পেলেন যে স্থানে পানি পৌছে নেই এর কারণে তাকে নতুন করে পুনরায় ওযু কারার নির্দেশ দিলেন।”

[ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি ইমাম দারাকুতনী সালেমের হাদীস থেকে তিনি ইবনে ওমর এবং তিনি আবূ বাকার (রা.) ও ওরম (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। (جاء رجل وقد توضأ وبقي على ظهر قدميه مثل ظهر إبهامه فقال له النبي صلى اللَّه عليه وصلم) ((ارجع فأتم وضوءك ففعل)) অর্থঃ “এক ব্যাক্তি ওযু করে উপস্থিত হলো তার দুপায়ের উপরিভাগে তার বৃদ্ধাঙ্গুলির পরিমাণ পানি পৌছে নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত ব্যক্তিকে বললেনঃ “ফিরে যাও এবং ওযু পূর্ণ করে এসো লোকটি তাই করল।”]

ওজুর শুরুতে “বিছমিল্লাহ” বলা।

ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার দলীল হলো আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস, তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেনঃ

((لا صلاة لمن لا وضوء له ولا وضوء لمن لم يذكر اسم اللَّه عليه))

অর্থঃ “যে ব্যক্তি ওযু করবে না তার সালাত কবূল হবে না এবং যে ব্যক্তি ওযুতে বিসমিল্লাহ বলবে না তার ওযু সহীহ হবে না।”

হাদীসটি ইমাম আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিয, ইবনে মাজাহ সহ অন্যান্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হাসান, এবং দলিল হিসাবে যথেষ্ঠ।

ওযু বিনষ্টকারী বিষয় সমূহ ৮টি

০১। পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে।

০২। শরীর থেকে খারাপ ময়লা পদার্থ বের হলে।

০৩। (ঘুম অথবা অন্য কোন কারণে) জ্ঞানশুন্য হওয়া।

০৪। স্ত্রীকে শাহওয়াত বা কামনার আকাঙ্খা নিয়ে স্পর্শ করা।

০৫। (কোন আবরণ ছাড়া) সামনে অথবা পিছনের দিক থেকে লজ্জাস্থানে হাত স্পর্শ করা।

০৬। উটের মাংস খাওয়া।

০৭। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া।

০৮। ইসলাম থেকে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যাওয়া।

[আল্লাহ আমাদেরকে এবং সমস্ত মুসলামনদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন।]

পঞ্চম শর্তঃ

শরীর, কাপড় এবং সালাতের স্থান থেকে নাজাসাত- অপরিচ্ছন্নতা দূর করা। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ

وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ سُورَةُ ٱلۡمُدَّثِّرِ

অর্থ- “তোমার পরিচ্ছদ পরিষ্কার কর।” [সূরা মুদ্দাসির ৪]

ষষ্ট শর্ত

লজ্জাস্থান ঢেকে রাখাঃ

আহলে ইলমের এ বিষয় ইজমা যে, যে ব্যক্তির কাপড় পরিধান করার শক্তি থাকার পরেও বিবস্ত্র হয়ে সালাত আদায় করবে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। পুরুষের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার সীমা হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত। এবং একই ভাবে ক্রীতদাসীদেরও হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত ঢেকে রাখার সীমা। আর স্বাধীনা মহিলার মুখমন্ডল ছাড়া তার সমস্ত শরীরই আওরাত। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ … ٣١ سُورَةُ ٱلۡأَعۡرَافِ

অর্থ- “হে আদম সন্তানগণ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ কর।” [সূরা আ’রাফ- ৩১]

অর্থাৎ তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক পরিধান কর।

সপ্তম শর্তঃ

সালাতের ওয়াক্তে হাজির হওয়া,

এর প্রমাণ হাদীসে জিবরিল (আঃ) তিনি প্রতি ওয়াক্ত সালাতের প্রথম ওয়াক্তে এবং তার শেষ ওয়াক্তে নবী (সাঃ) এর ইমামতি করন। এবং বলেনঃ

((يَا مُحَمَّدُ أَلصَّلَاةُ بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقَيْنِ))

অর্থঃ “হে মুহাম্মদ, এই দুই সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সালাতের ওয়াক্ত।”

ওয়াক্ত মত সালাত আদায় করা সম্পর্কে আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ

إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ سُورَةُ ٱلنِّسَاءِ

অর্থ- “নিশ্চয়ই সালাত ঈমানদারগণের উপর নির্দষ্ট সময়ের জন্য (আদায় করা) নির্ধারিত।” [সূরা নিসা- ১০৩]

সালাতের সময়ের প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ

أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ سُورَةُ ٱلۡإِسۡرَاءِ

অর্থ- “সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের সালাত; ফজরের সালাত পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে।” [সূরা বানী ইসরাইল/ইস্‌রা- ৭৮]

অষ্টম শর্তঃ

কিবলা মুখী হওয়া, এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ

قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ … ١٤٤ سُورَةُ ٱلۡبَقَرَةِ

অর্থ- “নিশ্চয়ই আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলা মুখীই করবো যা তুমি কামনা করছ; অতএব তুমি পবিত্রতম মসজিদের দিকে (কাবার দিকে) তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই ফিরিয়ে নাও।” [সূরা বাকারাহ- ১৪৪]

নবম শর্তঃ

নিয়্যত করা এবং নিয়্যতের স্থান হল অন্তর।

মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা বিদআত। নিয়্যতের প্রমাণ হাদীসঃ

((إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَات؛ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِىءٍ مَا نُوَى))

অর্থ- “সমস্ত কাজ-কর্মই নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়্যাত করেছে।” [বুখারী]

Tin Mul Nity, Page- 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

শাইখ আব্দুর রব আফ্ফান- দাওয়াহ ওয়া তাবলীগ ক্লাস, বিষয়- আকিদা (শবেবরাত)-২০, তাং- ১০-৫-২০১৭
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী – DWT class, বিষয়- রাসূলের আনুগত্য- ১৮, তাং- ১৭-০৮-২০১৭
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলালা মাদানী- কুরবানী-২০১৭, তাং- ১০-০৮-২০১৭
শাইখ জাকির হুসাইন- দাওয়াহ ওয়া তবলীগ ক্লাস, বিষয়- আরবী ভাষা শিক্ষা-৫, তাং- ২০-১১-২০১৬
শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল – DWT ক্লাস, বিষয়- যিলহজ্জ্ব মাসের ১০ দিনের আমল ও ফযিল, তাং- ১-৮-২০১৭
আহলি সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা, শাইখ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী
© Dawah wa Tablig since 2013