Tin Mul Nity, Page- 3
০১। শক্তি থাকলে দাড়ানো, ০২। তাকবীর তাহরীমাহ বলা, ০৩। (ইমাম ও মুকতাদি উভয়ের জন্যই) সূরা ফাতিহা পাঠ করা, ০৪। রুকুতে যাওয়া।, ০৫। রুকু থেকে (উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে) দাড়ানো, ০৬। শরীরের সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদাহ করা, ০৭। সজিদাহ থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে বসা, ০৮। দু’সিজদার মাঝে বসা, ০৯। সালাতের সমস্ত রুকন ধীর ও স্থিরতার সাথে আদায় করা, ১০। ক্রমানুসারে ধারাবাহিক ভাবে আদায় করা, ১১। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করা।, ১২। শেষ তাশাহুদের জন্য বসা, ১৩। নবি করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরূদ পাঠ করা। ১৪। ডানে ও বামে ছালাম ফিরানো।
শক্তি থাকলে দাড়ানো, এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ
حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ سُورَةُ ٱلۡبَقَرَةِ
অর্থ- “তোমরা সালাত সমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতকে (আসর এর সালাত কে) সংরক্ষণ কর এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে (সালাতে) দন্ডায়মান হও।” [সূরা বাকারা- ২৩৮]
তাকবীরে তাহরীমাহ বা সালাতের শুরুতে প্রথম তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করা। এর প্রমাণে হাদীসঃ
((تحريمها التكبير وتحليلها التسليم))
অর্থঃ “সালাত ছাড়া সকল কিছু হারাম করার এবং সালাতকে হালাল করার তাকবির”, উচ্চারণঃ “তাহরিমুহা-ততাকবির, এবং তাহলীলুহা-ততাসলীম” এর পর দু’আ ইস্তেফতাহ পাঠ করা। এটি পাঠ করা সুন্নাত। দু’আ ইস্তেফতাহ নিম্নরূপ।
১)
ٱللَّهُمَّ بَٰعِدۡ بَيۡنِي وَبَيۡنَ خَطَٰيَايَ كَمَا بَٰعَدۡتَّ بَيۡنَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِۗ ٱللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ ٱلۡخَطَٰيَا كَمَا يُنَقَّي ٱلثَّوۡبُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلدَّنَسِۗ ٱللَّهُمَّ ٱغۡسِلۡ خَطَٰيَايَ بِٱلۡمَاءِ وَٱلثَّلۡجِ وَٱلۡبَرَدِ
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বা‘ইদ বায়ইনী অবাইনা খাত্বায়্যায়্যা কামা বা’আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি অল মাগরিব, আল্লাহুম্মা নাক্বিনী মিনাল খাত্বায়্যা কামা য়্যুনাক্ক্বাস সাওবুল আবয়্যাযু মিনাদ দানাস, আল্লাহুম্মাগসিল খাত্বায়্যায়্যা বিল মায়ি অসসালজি অলবারাদ।”
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার মাঝে ও আমার গুনাহসমূহের মাঝে এতটা ব্যবধান রাখ, যেমন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ব্যবধান রেখেছ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে গোনাহ সমূহ থেকে পরিস্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিস্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমূহকে পানি, বরফ ও শীষির দ্বারা ধৌত করে দাও। [বুখারী ১/১৮৯, মুসলিম ১/৪১৯]
২)
سُبۡحَانَكَ ٱللَّهُمَّ وَبِحَمۡدِكَ وَتَبَارَكَ ٱسۡمُكَ وَتَعَالَىٰ جَدُّكَ وَلَاإِلَٰهَ غَيۡرُكَ
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা অবিহামদিকা, অতাবারা কাসমুকা অতা’আলা জাদ্দুকা অলা-ইলাহা গায়রুক।
অর্থঃ তোমার প্রশংসার সাথে তোমার প্রবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহত্ম্য অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। [আবু দাউদ]
[ফুট-নোটঃ দুয়ায়ে ইস্তিফতাহ এর বেস কয়েকটি দুয়া আছে যা সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় এর মধ্যে মাত্র দুইটি দুয়া এখানে উল্লেখ করা হলো।]
أَعُوذُ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ
অর্থ- “আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
শাব্দিক অর্থঃ ‘আউযু’ – আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি, ‘বিল্লাহি’ – আল্লাহর নিকট, ‘মিন’ – হইতে, ‘মিনাশ্ শায়তান’ – শায়তান হইতে, ‘রাজীম’ – বিতাড়িত। বিস্তারিত অর্থ এমন হয়- “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে বিতাড়িত এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরীভূত শয়তান হতে আশ্রয় গ্রহণের জন্য তোমাকেই আঁকরে ধরছি, যাতে সে আমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের কোন বিষয়ে আমার কোন ক্ষতি করতে না পারে।”
সূরা ফাতিহা পাঠ করা প্রত্যেক রাকআতের জন্য রুকন, যেমন হাদীসে উল্লেখ আছেঃ
((لَا صَلَوٰةَ لِمَنۡ لَمۡ يَقۡرَأُ بِفَاتِحَةِ ٱلۡكِتَٰبِ))
অর্থ- “যে ব্যক্তি (সালাতে) সূরা ফাতেহা পাঠ করে না তার সালাত হয় না।” [বুখারী, মুসলিম]
সূরা ফাতিহা হল উম্মুল কুরআন।
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١
“উচ্চারণ- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু।” এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বরকত, কল্যাণ ও সাহায্য কামনা করা হয়।
ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱضَّآلِّينَ ٧ سُورَةُ ٱلۡفَاتِحَةِ
অর্থ- “১) পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ২) আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। ৩) যিনি পরম দায়ালু, অতিশয় করুণাময়। ৪) যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। ৫) আমারা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। ৬) আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন। ৭) তাদের পথে যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে এবং তাদের পথেও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
শাব্দিক অর্থঃ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ অর্থ- প্রশংসা ও স্তুতি আল্লাহর জন্য, আলহামদু শব্দে আলিফ ও লাম ইছদিগরাক্ব বা সমস্ত হামদ বা প্রশংসাকে পরিব্যাপ্ত ও পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। আর —————–।
رَبِّ অর্থ মা‘আবূদ যিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, মালিক ও শাসনকর্তা, কর্তৃত্বকারী, বিধান দাতা এবং অগণিত নিয়ামতের দ্বারা লালন-পালনকারী।
ٱلۡعَالَمِينَ আল্লাহ ছাড়া প্রতিটি বস্তুই একেকটি আলম বা জগৎ আর আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা হলেন সমস্ত আলম বা জগতের লালনপালনকারী।
ٱلرَّحۡمَٰنِ এমন রহমত যা সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ব্যাপক। الرَّحِيم এমন রহমত যা শুধু ঈমানদারদের জন্য নির্দিষ্ট। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ
وَكَانَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَحِيمًا ٤٣ سُورَةُ ٱلۡأَحۡزَابِ
অর্থ- “এবং তিনি (আল্লাহ) মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু।” [সূরা আহযাব- ৪৩]
مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ অর্থ- প্রতিদান দিবসের মালিক, প্রতিদান দিবস এবং হিসাব নিকাশের দিবস, যেদিন প্রত্যেককে তার আমল ও কর্ম আনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে। ভাল আমলের জন্য উত্তম পুরস্কার এবং মন্দ আমলের জন্য মন্দ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ
وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلدَّينِ ١٧ ثُمَّ مَآ أَدۡرَىٰكَ مَايَوۡمُ ٱلدَّينِ ١٨ يَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسٞ لِنَفۡسٖ شَيۡئٗاۖ وَٱلۡأَمۡرُ يَوۡمَئِذٖ لِلَّهِ ١٩ سُورَةُ ٱلۡإِنفِطَارِ
অর্থ- “কর্মফল দিবস কি তা কি তুমি জান? আবার বলী- কর্মফল দিবস কি তা কি তুমি অবগত আছ? সে দিন একের অপরের জন্য কিছু করবার সামর্থ্য থাকবে না; এবং সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর।” [সূরা ইনফিতার ১৭-১৯]
প্রতিফল দিবস সম্পর্কে হাদীস থেকে প্রমাণঃ
আর্থঃ “বুদ্ধিমান ও চতুর সে যার অন্তর তার অনুগত এবং মৃর্ত্যুর পরের জন্য আমল করে আর অক্ষম ও দুর্বল সে যে তার আত্মা ও মনের প্রবৃত্তির অনুসরণ থাকে এবং আল্লাহর কাছে দীর্ঘজীবন লাভের আশা করে।” [ইমাম আমহমদ, তিরমিযী এবং হাকেম শাদ্দাদ ইবনে আউস থেকে বর্ণনা করেছেন এবং হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছন তবে ইমাম যাহাবী হাকেমের মন্তব্যে একমত নন।] إِيَّاكَ نَعۡبُدُ অর্থ- (হে আল্লাহ!) “তুমি ব্যতীত আমরা অন্য কারও ইবাদত করি না।” বান্দা তার প্রতিপালকের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা যে সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না।
إيَّاكَ نَعۡبُدُ অর্থাৎ (হে আল্লাহ্!) তুমি ব্যতীত আমরা অন্য কারও ইবাদত করিনা। বান্দা এবং তার প্রতিপালকের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা যে সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না। وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ বান্দা এবং তার প্রতিপালকের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট সাহায্য চাইবে না।
إِهۡدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ আয়াতে إهۡدِنَا এর অর্থ আল্লাহকে সম্বোধন পূর্বক বলা, হে আল্লাহ! আমাদেরকে পথ প্রদর্শন কর, এবং আমাদেরকে হিদায়াতের প্রতি প্রতিষ্ঠিত রাখ।ٱلصِّرَاطَ এর অর্থ ইসলাম, বলা হয়েছে এর অর্থ রাসুল বা কুরআন, এর উভয়টি সঠিক। ٱلۡمُسۡتَقِيمَ অর্থ এমন রাস্তা যার মধ্যে কোন বক্রতা নাই। صِرَاطَ الَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ এমন পথ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণীঃ
وَمَن يُّطِعِ ٱللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّينَ وَ ٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩ سُورَةُ ٱلۡنِّسَاءِ
অর্থ- এবং যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তবে তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবীগণ, সত্যবাদীগণ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী।” [সূরা নিসা- ৬৯]
غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ যাদের প্রতি গযব বর্ষিত হয়েছে, তারা হল ইহূদী সম্প্রদায়। যারা ইলম ও জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার পরেও সে মোতাবেক আমল করে নেই। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তোমাকে তাদের পথ থেকে রক্ষা করেন।وَلَا ٱلضَّآلِّينَ “তাদের পথেও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” তারা হল নাসারা সম্প্রদায়, যারা অজ্ঞতা ও বিভ্রান্ত হয়ে (শিরিক সহ বক্র ভাবে) আল্লাহর ইবাদত করে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের পথ থেকে দূরে রাখেন। যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর বাণীঃ
قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُمۡ بِٱلۡأَخۡسَرِينَ أَعۡمَٰلًا ١٠٣ ٱلَّذِينَ ضَلَّ سَعۡيُهُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَهُمۡ يَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ يُحۡسِنُونَ صُنۡعًا ١٠٤ سُورَةُ ٱلۡكَهۡفِ
অর্থঃ (হে রাসূল!) তুমি বলঃ আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব তাদের সম্বন্ধে যারা কর্মে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ? ওরাই তারা পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।” [সূরা কাহাফ- ১০৪]
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
((لتتبعن سنن من قبلكم حذو القذة بالقذة حتى لوا دخلوا جحر ضب لدخلتموه قالوا يارسول اللَّه اليهود والنصارى؟ قال فمن؟)) (أخرجاه)
অর্থ- (আমি আশংকা করছি) “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করবে (যা আদৌ করা উচিত নয়) এমন কি তারা যদি গুঁইসাপের গর্তেও ঢুকে যায়, তোমরাও তাতে ঢুকবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল, তারা কি ইহূদী ও নাসারা? জবাবে তিনি বললেন, তারা ছাড়া আর কে?”
قال صلى اللَّه عليه وسلم ((افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة وافترقت النصارى على اثنين وسبعين فرقة، وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة كلها فِى النار))
“অর্থঃ ইহূদ সম্প্রদায় একত্তর ফিরকায় (দলে) এবং নাসারাগণ বাহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল। এই উম্মত (উম্মতে মুহাম্মদীয়াহ) তিহাত্তুর ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হবে। কেবলমাত্র একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সেটি কোন দল? তিনি বললেনঃ আমি এবং আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।”
রুকু করা। রুকু হচ্ছে দণ্ডায়মান অবস্থা থেকে শরিরের উপরিভাগ ঝুকায়ে রাখা এ অবস্থায় দুই হাত সোজা করে হাটুর উপর রাখা, মাথ ও পিঠ যমিনের সমান্তরালে রাখা। এবং সহীহ হাদীসে বর্ণিত বাক্যগুলো পাঠ করা।
রুকু থেকে (উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে) দাড়ানো।
শরীরের সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজাদা করা।
সিজদাহ থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে বসা।
দু’সিজাদার মাঝে বসা।
يَٰٓأَ يُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْ … ٧٧ سُورَةُ ٱلۡحَجِّ
অর্থঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকু কর এবং সিজদা কর।” [সূরা হজ্জ- ৭৭]
হাদীস থেকে দলীলঃ নবী করীম বলেছেনঃ
قال النبيى صلى اللَّه عليى وسلم (( أمرت أن أسجد على سبعة أعظم))
অর্থঃ “আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ কারি।” (কপাল, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ)
সালাতের সমস্ত রুকন ধীর ও স্থিরতার সাথে আদায় করা।
এবং তা যথাক্রমে ও ধারাবাহিক ভাবে আদায় করা। এর প্রমাণে নিম্নের হাদীস- (যিনি তার সালাতে ভুল করেছিলেন)
عن أبي هريرة رضي اللَّه عنه (( بينما نحن جلوس عند النبي صلي اللَّه عليه وَسلم إذ دخل رجل فصلى فسلم على النبي صلي اللَّه عليه وَسلم فقال: ارجع فصل فإنك لم تصل فعلها ثلاثا)) ثم قال : والذي بعثك بالحق نبيا لا أحسن غير هذا فعلمني. فقال له النبي صلي اللَّه عليه وَسلم إذا قمت إلى الصلاة فكبر ثم اقرأ ما تيسر معك من القرآن، ثم اركع حتى تطمئن راكعا، ثم ارفع حتى تعتدل فائما ثم اسجد حتى تطمئن ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا ثم افعل ذلك في صلاتك كها))
উদ্দেশ্যে সালামের জবাব দিয়ে বললেন) তুমি ফিরে যাও এবং পুনরায় সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাত আদায় কর নাই (তোমার সালাত হয় নাই) এভাবে তিনবার করল। অতঃপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য রাসূল করে পাঠিয়েছেন আমি এর চেয়ে আর উত্তম সালাত জানি না, তাই আপনি আমাকে সালাত শিক্ষা দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যখন সালাত আদায় করার জন্য দাড়াবে তখন আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বলবে অতঃপর কুরআন থেকে তোমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা পাঠ করবে। অতঃপর রুকু করবে এবং রকুতে পূর্ণ মুতমাইন হবে অতঃপর মাথা উঠিয়ে একেবারে সোজা হয়ে দাড়াবে অতঃপর সিজদা করবে এবং সিজদায় পূর্ণভাবে প্রশান্ত হবে অতঃপর মাথা তুলে একেবারে সোজা হয়ে বসবে। এ ভাবেই তুমি ধীরস্থির ভাবে পূর্ণ সালাত আদায় করবে।” [বুখারী ও মুসলিম]
শেষ তাশাহুদের জন্য বসা ফরযকৃত রুকন, যেমন ইবনে মাসউদের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
((عن ابن مسعود رضي اللَّه عنه قال: كنا نقول قبل أن يفرض علينا التشهد، السلام على اللَّه من عباده فان اللَّه هو السلام ولكن قولوا ))
অর্থ- ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমাদের প্রতি তাশাহুদ ফরয হওয়ার পূর্বে বলতাম আল্লাহর উপর তাঁর বান্দার পক্ষ থেকে সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর উপর তাঁর বান্দার পক্ষ থেকে সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক এমন কথা তোমরা বলো না। কেননা আল্লাহ তিনি নিজেই সালাম বা শান্তি।” বরং তোমরা বলবে- “তাশাহুদ।”
((التَّحِياتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَليْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ))
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াছ ছালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাতু আস্সলামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন। আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদন আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থ- যাবতীয় ইবাদত, মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।”
শাব্দিক অর্থঃ
(التَّحِيَّاتُ) এর আর্থ- সমস্ত প্রকার সম্মান, মর্যদা ও শাসনক্ষমতা এবং উপযুক্ততা আল্লাহর জন্য, যথা বাঁকা হয়ে ঝুকে পড়া, রুকু করা, সিজদাহ করা, স্থির হয়ে ধারাবাহিক ভাবে এ সব করার জন্য অবস্থান করা। আল্লাহর শ্রষ্টত্ব ঘোষণার জন্য যা কিছু করা হয় তাই ইবাদত। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য এর কোন কিছু সাব্যস্ত করবে সে কাফির ও মুসরিক হয়ে যাবে।
(وَالصَّلَوَات) এর অর্থ হল সমস্ত প্রকার ডাকা ও আহবান বা দু‘আ, বলা হয়েছে যে অর্থ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত।
(وَالطَّيَّبَاتُ) এর অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র এবং তিনি মৌখিক, শারীরিক ইবাদতের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ) এর মাধ্যমে তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য রহমত, বরকত এবং শান্তির জন্য দু‘আ করছো।
(السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) এর মাধ্যমে তুমি তোমার নিজের প্রতি এবং আসমান ও যমীনের সমস্ত সৎ ও ভাল লোকের জন্য শান্তির দু‘আ করছো। ছালাম অর্থ দু‘আ। সৎ ও যোগ্য লোকদের জন্য দু‘আ করা যাবে তবে আল্লাহর সাথে তাদেরকে আহবান করা যাবে না।
(أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) এর মাধ্যমে তুমি সুনিশ্চিত ভাবে সাক্ষ্য প্রদান করছ যে আসমান এবং যমীনে আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই।
(وَأَشْهَدُ أَنًّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জন আল্লাহর বান্দা তিনি ইবাদতের হকদার নন এবং তিনি আল্লাহর রাসূল তার ইবাদত করা যাবে না বরং তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে দাসত্বের মাধ্যমে সম্মানে ভূষিত করেছেন। রাসূলের দাসত্বের প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١ سُورَةُ ٱلۡفُرۡقَانِ
অর্থঃ কত মহান তিনি (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।” [সূরা ফুরকান- ১]
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থ- হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করেছন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত।”
(الصلاة) সালাত শব্দটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হলে মালায়ে আ‘লায় তাঁর বান্দার প্রতি প্রশংসা করা বুঝায়। যেমন- ইমাম বুখারী (রহ) আবী আলীয়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন (صلاة اللَّه على عبده ثناؤه في الملأ الأعلى) অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দার প্রতি সালাত এর অর্থ হল তাঁর নিকটবর্তী মালাকদের কাছে প্রশংসা করা। বলা হয়েছে এর অর্থ রহমত তবে প্রথম মতটিই সঠিক। এবং সালাত শব্দটি ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে হলে এর অর্থ হবে ক্ষমা প্রার্থনা করা, আর মানুষের পক্ষ থেকে হলে এর অর্থ হবে দু‘আ করা।
وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল কর, যেমন তুমি ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর বরকত নাযিল করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত।”
(وبَارك على محمد) এর শেষ পর্যন্ত পাঠ করা এবং এর পর অন্যান্য কথা ও কাজ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
সালাতের ওয়াজিব সমূহ ৮ টিঃ
০১। তাকবীরে তাহরীমাহ এবং সালাতের অন্যান্য তাকবীর। আল্লাহু আকবার বলা।
০২। রুকুতে (سُبحان ربي العظيم) সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম, বলা।
০৩। ইমাম ও একাকীর (سمع الله لمن حمده) সামি ‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলা।
০৪। সকলের জন্য (ربنا ولك الحمد) রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, বলা।
০৫। সিজদায় (سبحان ربي الأعلى) সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা, বলা।
০৬। দু’সিজদার মাঝে (رب اغفرلي) রাব্বিগফিরলি, বলা।
০৭। প্রথম তাশাহুদ পড়া।
০৮। এবং প্রথম তাশাহুদের জন্য বসা।
সালাতের কোন রুকন ভুলে গেলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে এ কারণে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সালাতের কোন একটি ওয়াজিব ছাড়া পড়লে তা ছাড়ার কারণে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। এবং উক্ত ওয়াজিব ভুলে যাওয়ার কারণে ছাড়া পরলে সাহু সিজদার মাধ্যমে এর সংশোধন করা সম্ভব। আল্লাহই অধিক অবগত।
মহান আরশের প্রতিপালক ও মালিকের বারগহে প্রার্থনা করি তিনে যেন তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতে রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং যেখানেই এবং যে অবস্থায় থাক না কেন তিনি যেন তোমাকে সর্বাবস্থায় তোমার অবস্থানকে বরকত ও কল্যাণময় করেন। এবং তোমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন, যাকে কিছু প্রদান করা হলে সে শুকরিয়া আদায় করে এবং কোন পরীক্ষা করা হলে সে সবুর ও ধৈর্য ধারণ করে এবং কোন গুনাহ করলে সে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর এই তিন শ্রেণীর মানুষই হলেন কল্যাণ ও সমৃদ্ধির অধিকারি।
প্রিয় পাঠক! জেনে রাখ, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তোমাকে তাঁর আনুগত্য করার পথ প্রদর্শন করুন। আর মিল্লাতে ইবরাহীমের ধর্ম বিশ্বাস হল যে, তোমরা এক মাত্র আল্লাহর ইবাদত বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ ভাবে করো। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এ সম্পর্কে এরশাদ করেনঃ
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنۡسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ سُورَةُ ٱلذَّارِيَاتِ
অর্থঃ আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” [সূরা যারিয়াত- ৫৬]
এ কথা যখন অবগত হলে যে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তোমাকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন তা হলে এ কথাও জেনে রাখ, যে ইবাদতে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ নেই সে ইবাদতকে ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। যেমন পবিত্রতা ছাড়া সালাতকে সালাত হিসেবে অভিহিত করা যায় না। তাই যখন ইবাদতে কোন শিরক দাখিল হবে সে ইবাদত বাতিল হতে বাধ্য, যেমন পবিত্রতার মধ্যে কোন অপবিত্রতার অনুপ্রবেশ করলে অপবিত্র হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর তুমি এ কথাও অবগত হলে যে যখন ইবাদতে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটবে তখন উক্ত ইবাদত বাতিল হয়ে যাবে এবং সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং শিরককারী চিরস্থায়ী জাহান্নমে অবস্থান করবে। কাজেই এ কথা অবগত হলে যে তোমার প্রতি উক্ত বিষয়ে (তাওহীদ সম্পর্কে) জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আশা করা যায় যে আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তোমাকে এই জাল বা ফাঁদ থেকে রক্ষা করবেন আর তা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, যে সম্পর্কে আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এরশাদ হলোঃ
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ … ١١٦ سُورَةُ ٱلنِّسَآءِ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করেন না এবং এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন।” [সূরা নিসা- ১১৬]
পূর্বে উল্লেখিত শিরকের বিভিন্ন মুখি ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে (ইসলামের) চারটি ভিত্তি সম্পর্কে অবগত হতে হবে, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যে চারটি ভিত্তিকে তাঁর কিতাবে (কুরআনে) উল্লেখ করেছেন।
তোমার এ কথা অবগত হওয়া প্রয়োজন যে, যে সমস্ত কাফেরদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তারা এ কথা স্বীকার করত যে আল্লাহ তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং ব্যবস্থাপক কিন্তু তাদের এই স্বীকারোক্তি তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করাতে পারে নেই।
এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١ سُورَةُ يُونُسَ
অর্থঃ “(হে রাসূল!) তুমি বল, তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে আসমান ও যমীন হতে রিযিক পৌঁছিয়ে থাকেন? অথবা কে তিনি, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের করেন, আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে বের করেন? আর তিনি কে, যিনি সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন? অবশ্যই তারা বলবে যে, আল্লাহ; অতএব তুমি বল- তবে কেন তোমরা (শিরক হতে) নিবৃত্ত থাকছ না?”
কাফিররা বলত যে আমরা তাদেরকে (মিথ্যা মা‘বূদ ও আওলীয়াদেরকে) আহবান করতাম এবং তাদের অভিমুখী হতাম শুধু (আল্লাহর) নৈকট্য ও শাফাআত পাওয়ার জন্য।
নৈকট্য লাভের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَ مَانَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحۡكُمُ بَيۡنَهُمۡ فِي مَاهُمۡ فِيهِ يَخۡتَلِفُونَۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَايَهۡدِي مَنۡ هُوَ كَاذِبٞ كَفَّارٞ ٣ سُورَةُ ٱلزُّمَرِ
অর্থঃ জেনে রেখো, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, আর বলে, আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করেছে আল্লাহ তার ফায়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী (সত্যকে মিথ্যা জ্ঞানকারী) ও কাফির (সত্যকে অস্বীকারকারী), আল্লাহ তাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।” [সূরা যুমার- ৩]
শাফাআতের প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَالَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنۡفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِنۡدَ ٱللَّهِۚ … ١٨ سُورَةُ يُونُسَ
অর্থঃ “আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদত করে, যারা তাদের কোন অপকারও করতে পারে না এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারে না, তারা বলে- এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপরিশকারী।” [সূরা ইউনুস- ১৮]
যে শাফা‘আত আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে এমন বিষয় আবেদন করা যা আল্লাহ ব্যতীত তার দেওয়ার কোনই ক্ষমতা নাই। [আল্লাহর অনুমতি নাই এমন কোন সুপারিশকারীকে সাব্যস্ত করা এবং সে বিষয়ে সেই সুপারিশকারীর সুপারিশ করার কোন ক্ষমতা তার নাই] আল্লাহর বাণীঃ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَافِرُونَ هُمُ ٱلضَّٰلِمُونَ ٢٥٤ سُورَةُ ٱلۡبَقَرَةِ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা হতে সময় (কেয়ামত) সমাগত হওয়ার পূর্বে ব্যয় কর যাতে ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও (আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন) সুপারিশ নেই আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী।” [সূরা বাকারাহ- ২৫৪]
ইহা যা আল্লাহর কাছে চাওয়া হয় এবং শাফাআতকারীকে শাফাআত লাভে সম্মানিত করা হয়েছে ও সুপারিশকৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর অনুমতির পরে উক্ত ব্যক্তির কথা ও কাজে আল্লাহর রাজি খুশি থেকেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেনঃ
مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ … ٢٥٥ سُورَةُ ٱلۡبَقَرَةِ
আর্থঃ “এমন কে আছে যে তদীয় অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে?” [সূরা বাকারাহ- ২৫৫]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক মানব জাতির কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত ও আলাদা আলাদা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ ফিরিশতার, কেউ নবীগণের ও সালেহীনদের ইবাদত করত, আবার কেউ পাথর ও বৃক্ষের পূজা করত অথবা তাদের কেউ সূর্য ও চন্দ্রের উপাসনা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকলের সাথে সংগ্রাম ও সর্বশেষ (যখন আল্লাহ হুকুম হল তখন) লড়াই করেছেন এবং তাদের মধ্যে কোনই পার্থক্য করেন নাই। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهۚ … ٣٩ سُورَةُ ٱلۡأَنۡفَالِ
অর্থঃ “তোমরা সদা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিৎনার অবসান হয় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়। (অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন ও শাসন সামগ্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়)।” [সূরা আনফাল- ৩৯]
চন্দ্র ও সূর্যকে সিজদাহ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ- আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْ لِلَّهِ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧ سُورَةُ ٱلۡفُصِّلَتۡ
অর্থঃ তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রজনী ও দিবস, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়; সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।” [সূরা হা- মীম আসসাজদাহ/ফুস্সিলাত ৩৭]
ফিরিশতার ইবাদত করা থেকে বিরত থাকার আদেশ- আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَ لَا يَأۡمُرَكُمۡ أَن تَتَّخِذُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَٱنَّبِيِّينَ أَرۡبَابًا أَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡكُفۡرِ بَعۡدَ إِذۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ٨٠ سُورَةُ آلِ عِمۡرَانَ
অর্থঃ “আর তিনি তোমাদেরকে আদেশ করেন না যে, তোমরা ফিরিশতাগণ ও নবীগণকে প্রতিপালক রূপে গ্রহণ কর; তোমরা আত্মসমর্পণকারী হবার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফুরীর (অবিশ্বাসীর) আদেশ দিবেন?” [সূরা ইমরান- ৮০]
নবীগণের ইবাদত না করার আদেশ- আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنۡتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّىَ إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبْحَٰنَكَ مَايَكُونُ لِيٓ أَنۡ أَقُولَ مَالَيۡسَ لِي بِحَقٍّۚ إِن كُنۡتُ قُلۡتُهُۥ فَقَدۡ عَلِمۡتَهُۥ تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَافِي نَفۡسِكَ إِنَّكَ أَنۡتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ ١١٦ سُورَةُ ٱلۡمَائِدَةِ
অর্থঃ আর যখন আল্লাহ বলেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে মা‘বূদ নির্ধারণ করে নাও? ঈসা নিবেদন করবেন আমি তো আপনাকে পবিত্র মনে করি; আমার পক্ষে কোনক্রমেই শোভনীয় ছিল না যে, আমি এমন কথা বলি যা বলার আমার কোনই অধিকার নেই; যদি বলে থাকি, তবে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে, আপনি তো আমার অন্তরের কথা জানেন, পক্ষান্তরে আপনার অন্তরের যা কিছু রয়েছে আমি তো তা জানি না; সমস্ত গায়েবের বিষয় আপনিই জ্ঞাত।” [সূরা মায়িদাহ- ১১৬]
সালেহীন বা সৎলোকদের ইবাদত করা থেকে বিরত থাকার আদেশ, আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُۥٓۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورٗا ٥٧ سُورَةُ ٱلۡإِسۡرَاءِ
অর্থঃ তারা যাদেরকে (সালেহীন) আহবান করে তারাই তো তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে, তাঁরা দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁরা শাস্তিকে ভয় করে। তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা বাণী ইসরাইল- ৫৭]
বৃক্ষ ও পাথরের পূজা করা থেকে বিরত থাকার আদেশ, আল্লাহর বাণীঃ
أَفَرَأَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ سُورَةُ ٱلنَّجۡمِ
অর্থঃ “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ‘উয্যা সম্বন্ধে এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্বন্ধে?” [সূরা নাজম- ১৯-২০]
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসঃ
((عن أبي واقد الليثي اللَّه عنه قال: خر جنا مع النبي صَلى اللَّه عليه وسلم إلى حنين ونحن حدثاء عهد بكفر , وللمشركين سدرة يعكفون عندها وينوطون أسلحتهم , يقال لها ذات أنواط فمراط فمررنا بسدرة فقلنا: يا رسول اللَّه إجعل لنا ذات أنواط كما لهم ذات أنواط))
অর্থঃ “আবু ওয়াকিদ আল লাইছী থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে হুনাইনের (যুদ্ধের) উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি (নওমুসলিম)। এক স্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুলগাছ ছিল, যার চারপাশে তারা বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। গাছটিকে ‘যাতু আনওয়াতু’ বলা হত। আমরা একদিন একটি কুলগাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললাম ‘হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের যেমন, যাতু আনওয়াত আছে আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত’ [একটা গাছ] নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকবার তোমাদের এ দাবিটি পূর্ববর্তীদের রীতি নীতি ছাড়া আর কিছু নয়। যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলছ যা বানী ইসরাঈল মুসা (আঃ) কে বলেছিল। তারা বলেছিল, হে মূসা! মুশরিদের যেমন মা’বূদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা’বূদ বানিয়ে দাও। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথা বলছ।” [সূরা আরাফ- ১৩৮] “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতিই অবলম্বন করছ।” [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং সহীহ বলেছেন।]
আমাদের যামানার মুশরিকগণ পূর্বের যামানার মুশরিকদের থেকে অধিক রূঢ় সভাবের, কারণ পূর্বের যামানার মুশরিকগণ (শুধু) সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময় শিরক করত এবং কষ্ট ও দুঃখের সময় আন্তরিক ও খাঁটি ভাবে আল্লাহকে ডাকত, আর আজকের যামানার মুশরিকগণ সুখ ও দুঃখ উভয় অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে থাকে। এর প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
فَإِذَا رَكِبُواْفِي ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُاْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ فَلَمَّا نَجَّٰهُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ يُشۡرِكُونَ ٦٥ سُورَةُ ٱلۡعَنكَبُوتِ
অর্থঃ “তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে; অতঃপর তিনি (আল্লাহ) যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়।” [সূরা আনকাবূত- ৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নেতা ও সর্দার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবাগণের প্রতি দরূদ ও সালাম নাযিল করুন।
Tin Mul Nity, Page- 3