ছিয়ামের মাছালা মাছায়েল
আল্লাহ বলেন- “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হ‘তে পার। [সূরা বাকারা ২/১৮৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যাস্তের সাথে সাথে ছায়েম ইফতার করবে।” [বুখারী হা/১৯৪৫]
ছিয়ামের নিয়তঃ নিয়ত অর্থ মনন করা বা সংকল্প করা। তাই মনে মনে ছিয়ামের সংকল্প করাই যথেষ্ট। ছালাত, ছিয়াম বা অন্য কোন ইবাদতের শুরুতে মুখে আরবীতে নিয়ত পড়ার কোন শারঈ ভিত্তি নাই। মূলত মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত বলা বিদ‘আত।
তারাবীহর সালাতঃ মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, “রাসূল (সাঃ) রামাযানের বা রামাযানের বাইরে (তিন রাকা‘আত বিতরসহ) এগারো রাকা‘আতের বেশী সালাত আদায় করতেন ন”। [বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত]
সাহারীর আযানঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাকতুম (রাঃ) দিতেন। তাই সাহারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “বেলাল রাত্রে আযান দিলে তোমরা খানাপিনা কর, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতুম ফজরের আযান দেয়”। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত] । বুখারীর ভাষ্যকার হাফেজ ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, বর্তমান কালে সাহারীর সময় লোক জাগানোর নামে (আযান ব্যতীত মাইকে কুরআন তেলওয়াত, লোক ডাকা, ইসলামী সঙ্গীত ও ক্যাসেট বাজানো, রাস্তায় ঢোল পিটান, সাহারীর গান গাওয়া, সাইরেন দেওয়া, ইত্যাদি) যা কিছু করা হয় সবই বিদ‘আত। [ফাতহুল বারী হা/৬২২-৬২৩-এর ব্যাখ্যা, ২/১২৩, আযান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩]
সঠিক সময়ে ইফতারঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “সূর্য যখনই অস্ত যাবে, তখনই ইফতার করবে।” [বুখারী, মিশকাত] রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “দ্বীন চিরদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন লোকেরা ইফতারী তারাতাড়ি করবে। কারণ ইহুদী-খ্রীষ্টানরা ইফতার দেরীতে করে” [আবু দাউদ, হা/২৩৫৩, মিশকাত হা/১৯৯৫]
ইফতারের দু‘আঃ ইফতারের শুরুতে শুধু “বিসমিল্লাহ” বলবে [বুখারী হা/৫৩৬৭, মিশকাত হা/৪১৫৯] আর ইফতার শেষে বলবে, “যাহাবায যামউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ”। অর্থঃ “পিপাসা দূরীভূত হল, শিরাগুলো সজীব হল এবং আল্লাহ চাহে তো পুরস্কার নির্ধারিত হল” [আবু দাউদ হা/২৩৫৭, মিশকাত হা/১৯৯৩-৯৪] তবে সাধারণ দু‘আ হিসাবে শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” ও বলা যাবে। [মুসলিম হা/২৭৩৪]
লায়লাতুল ক্বদরের দু‘আঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুববুন তুহিববুল ‘আফওয়া ফা‘ফু আন্নী”। অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। [তিরমিযী হা/৩৫১৩; মিশকাত হা/২০৯১] শুধু ২৭ তারিখ রাত্রি নয়, বরং ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এই পাঁচ রাত্রিতে ক্বদর তালাশ করা সুন্নাত। এ রাতে দীর্ঘ কিয়াম, দীর্ঘ রুকু, দীর্ঘ সিজদা দ্বারা রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে হয়। এ সালাতের সময় ইশার সালতের পর থেকে সাহারীর আগ পর্যন্ত। কিয়ামে ধিরে ধিরে স্পষ্ট করে কুরআন তিলওয়াত করতে হয়। শরীর ক্লান্ত হলে চার রাকাত সালাত আদায় করার পর বিশ্রাম গ্রহণ করে আবার বাঁকি চার রাকাত ও তিন রাকাত বিতীর সালাত আদায় করতে হয়। সভাবিক ভাবে তাহাজ্জুদ সালাত প্রতি রাতে বার মাস আদায় করা খুব পছন্দনীয় ও ফজিলত পূর্ণ ইবাদত। [বুখারী হা/২০১৭; হাদীস গ্রন্থ বুকারী, তাহাজ্জুদ সালাত অধ্যায়]
ফিৎরাঃ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্রীতদাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড়, সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা’ খেজুর, যব, ইত্যাদি (অন্য বর্ণনায়) খাদ্যবস্তু ফিৎরার যাকাত হিসাবে ফরয করেছেন এবং ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আমাদেরকে জমা করার নির্দেশ দান করেছেন।” [বুখারী হা/১৫০৩-৫; মুসলিম হা/২৩২৯; মিশকাত হা/১৮১৫, ১৮১৬]
সিয়াম ভঙ্গের কারণঃ (১) যাতে কেবল কাযা ওয়াজিব হয়। যেমনঃ ইচ্ছকৃত ভাবে খানাপিনা করা, বমি করা, সূর্যাস্তের পূর্বেই হায়েয নিফাস শুরু হওয়া ইত্যাদি। (২) যাতে ক্বাযা কাফফারা স্বরূপ দু’টিই ওয়াজিব হয়। যেমনঃ স্ত্রী সহবাস করা। এক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই কাফফারা স্বরূপ একটানা দুই মাস সিয়াম পালন করতে হবে অথবা ষাট জন মিসকিনকে খানা খাওয়াতে হবে। [বুখারী হা/১৯৩৬; মিশকাত হা/২০০৪] (৩) তবে সিয়াম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে বা সহবাসজনিত নাপাকী অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে, ভুলে খানাপিনা করলে, চোখে সূর্মা লাগালে, বা মিসওয়াক করলে, সিয়াম ভঙ্গ হয় না। [বুখারী হা/১৯৩০, ১৯৩৩; মিশকাত] (৪) অতি বৃদ্ধ বা চিররোগী ব্যক্তি সিয়াম পালনে অক্ষম হলে প্রতি সিয়ামের বিনিময়ে একজন করে মিসকীন বা দরিদ্র ব্যক্তিকে খানা খাওয়াবেন, [সূরা বাকারা ১৮৫] । গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মহিলারাও সিয়ামের বিনিময়ে একজন করে মিসকীন বা দরিদ্র ব্যক্তিকে খানা খাওয়াবেন [আবুদাউদ হা/২৪০৮]। (৫) মৃত ব্যক্তির ক্বাযা ছিয়াম তার উত্তরাধিকারীগণ আদায় করবেন অথবা তার বিনিময়ে ফিদিয়া দিবেন। ফিদিয়ার পরিমাণ দৈনিক এক মুদ বা শিকি ছা’ চাউল বা গম। তবে বেশী দিলে বেশী নেকী পাবেন।
ছিয়ামের সময় সূচী
আপনার নিজ এলাকার জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরে দেয়া ইফতারি ও সাহরীর সময় সূচী ডাউনলোড করুন
হিজরী | খ্রীষ্টাব্দ | বঙ্গাব্দ | বার | সাহরির শেষ সময় | ইফতারের শেষ সময় |
---|---|---|---|---|---|
০১ রমাযান | ০৭ মে | — জ্যৈষ্ঠ | মঙ্গল বার | ৩:৫৪ | ৬:৩৩ |
০২ রমাযান | ০৮ মে | — জ্যৈষ্ঠ | বুধবার | ৩:৫৪ | ৬:৩৪ |
০৩ রমাযান | ০৯ মে | — জ্যৈষ্ঠ | বৃহস্পতিবার | ৩:৫৩ | ৬:৩৪ |
০৪ রমাযান | ১০ মে | — জ্যৈষ্ঠ | শুক্রবার | ৩:৫২ | ৬:৩৫ |
০৫ রমাযান | ১১ মে | — জ্যৈষ্ঠ | শনিবার | ৩:৫২ | ৬:৩৫ |
০৬ রমাযান | ১২ মে | — জ্যৈষ্ঠ | রবিরার | ৩:৫১ | ৬:৩৬ |
০৭ রমাযান | ১৩ মে | — | সোমবার | ৩:৫০ | ৬:৩৬ |
০৮ রমাযান | ১৪ মে | — | মঙ্গলবার | ৩:৫০ | ৬:৩৭ |
০৯ রমাযান | ১৫ মে | — | বুধবার | ৩:৪৯ | ৬:৩৭ |
১০ রমাযান | ১৬ মে | — | বৃহস্পতিবার | ৩:৪৮ | ৬:৩৮ |
১১ রমাযান | ১৭ মে | — | শুক্রবার | ৩:৪৮ | ৬:৩৮ |
১২ রমাযান | ১৮ মে | — | শনিবার | ৩:৪৭ | ৬:৩৯ |
১৩ রমাযান | ১৯ মে | — | রবিবার | ৩:৪৭ | ৬:৪০ |
১৪ রমাযান | ২০ মে | — | সোমবার | ৩:৪৬ | ৬:৪০ |
১৫ রমাযান | ২১ মে | — | মঙ্গলবার | ৩:৪৫ | ৬:৪০ |
১৬ রমাযান | ২২ মে | — | বুধবার | ৩:৪৫ | ৬:৪১ |
১৭ রমাযান | ২৩ মে | — | বৃস্পতিবার | ৩:৪৪ | ৬:৪১ |
১৮ রমাযান | ২৪ মে | — | শুক্রবার | ৩:৪৪ | ৬:৪১ |
১৯ রমাযান | ২৫ মে | — | শনিবার | ৩:৪৩ | ৬:৪২ |
২০ রমাযান | ২৬ মে | — | রবিবার | ৩:৪৩ | ৬:৪২ |
২১ রমাযান | ২৭ মে | — | সোমবার | ৩:৪২ | ৬:৪৩ |
২২ রমাযান | ২৮ মে | — | মঙ্গলবার | ৩:৪২ | ৬:৪৩ |
২৩ রমাযান | ২৯ মে | — | বুধবার | ৩:৪১ | ৬:৪৪ |
২৪ রমাযান | ৩০ মে | — | বৃহস্পতিবার | ৩:৪১ | ৬:৪৪ |
২৫ রমাযান | ৩১ মে | — | শুক্রবার | ৩:৪০ | ৬:৪৫ |
২৬ রমাযান | ০১ জুন | — | শনিবার | ৩:৪০ | ৬:৪৫ |
২৭ রমাযান | ০২ জুন | — | রবিবার | ৩:৪০ | ৬:৪৬ |
২৮ রমাযান | ০৩ জুন | — | সোমবার | ৩:৪০ | ৬:৪৬ |
২৯ রমাযান | ০৪ জুন | — | মঙ্গলবার | ৩:৩৯ | ৬:৪৬ |
৩০ রমাযান | ০৫ জুন | — | বুধবার | ৩:৩৯ | ৬:৪৭ |
জ্ঞাতব্যঃ রমাযান মাসের শুরু এবং শেষ চন্দ্র মাসের (চাঁদ দেখা) চন্দ্রোদয়ের উপর নির্ভরশীল | |||||
যে সব জায়গায় সাহরীর শেষ সময় ঢাকার সময়ের সাথে অনুসরণ করবেনঃ- টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও চাঁদপুর। |
ঢাকার সময়ের পূর্বে | সময় | ঢাকার সময়ের পরে |
---|---|---|
চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, নীলফামারী, গাজীপুর। | ১ মিনিট | বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ |
নরসিংদী, গাইবান্দা, জামালপুর, ফেনী, কুমিল্লা, রংপুর | ২ মিনিট | শরীয়তপুর, ভোলা |
বান্দরবন, লালমণীরহাট, ময়মনসিংহ | ৩ মিনিট | রাজবাড়ী, ফরীদপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, বরিশাল |
কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, রাঙ্গামাটি, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি | ৪ মিনিট | নাটোর, পাবনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি |
নেত্রকোনা | ৫ মিনিট | মাগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, পিরোজপুর |
হবিগঞ্জ | ৬ মিনিট | চাঁপাই নবাবগঞ্জ, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, বরগুনা, খুলনা |
৭ মিনিট | যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর | |
সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার | ৮ মিনিট | সাতক্ষীরা |
সিলেট | ৯ মিনিট |
ঢাকার সময়ের পূর্বে | সময় | ঢাকার সময়ের পরে |
---|---|---|
মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, মাদারীপুর | ১ মিনিট | নেত্রকোনা, খুলনা, মানিকগঞ্জ |
ঝালকাঠি, বরিশাল, সুনামগঞ্জ | ২ মিনিট | ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, নড়াইল |
পটুয়াখালী, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চাঁদপুর, বরগুনা | ৩ মিনিট | টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা |
কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, ভোলা | ৪ মিনিট | জামালপুর, শেরপুর, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ |
নোয়াখালী | মিনিট ৫ | কুষ্টিয়া, পাবনা |
ফেনী | ৬ মিনিট | গাইবান্দা, চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া |
– | ৭ মিনিট | মেহেরপুর, নাটোর, কুড়িগ্রাম |
খাগড়াছড়ি | ৮ মিনিট | রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, লালমণীরহাট, রংপুর |
চট্রগ্রাম | ৯ মিনিট | |
রাঙামাটি | ১০ মিনিট | চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী |
কক্সবাজার, বান্দরবান | ১২ মিনিট | ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় |