রমজানে সিয়াম, কিয়াম জরুরী মাসালা
Posted at April 13, 2021 10:36 am by Abdur Rakib Madani
| Posted In
Islam
সিয়াম গাইড
أحكام الصيام
সিয়াম কিয়াম শুরু করার পূর্বে পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখক: আব্দুর রাকীব মাদানী
عبد الرقيب المدني
- আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবাদ:
- সিয়াম পালন একটি ফরয ইবাদত যা, প্রত্যেক সাবালক, সুস্থ ও মুকিম ( মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি ) মুসলিমের প্রতি জরুরি । যেহেতু প্রত্যেক ইবাদত কবুলের প্রথম শর্তই হচ্ছে সে ইবাদতটি খাঁটি ভাবে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হওয়া তাই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই সিয়াম ( রোযা) পালন করা আবশ্যক।
- সিয়ামের সময়সীমা হল, ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এই সময় যাবতীয় পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও যৌন সঙ্গম থেকে বিরত থাকার নাম সাউম বা রোযা । আর বাকি অঙ্গ যেমন জিহব্বা, চোখ , কান, হাত-পা ইত্যাদিকে যাবতীয় মন্দ বলা, দেখা, শোনা এবং করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে রোযাকে পূর্ণতা দান করা , রোযার সংরক্ষণ করা এবং সিয়াকে কলুষিত না করা।
- ফজর পূর্বে নিয়ত তথা সংকল্প করার মাধ্যমে সাউম শুরু হয়। এই সময় কিছু আহার করা ভাল, যাকে সাহুর (সাহরী) বলা হয়। এই আহার বরকতপূর্ণ এবং মুসলিম ও অমুসলিমের সিয়ামের মাঝে পার্থক্যকারী, যা খাওয়া সুন্নাত জরুরি নয় । তাই রোযা রাখার নিয়ত ছিল কিন্তু যে কোন কারণে সাহুর খেতে পারেনি তার সাউম শুদ্ধ।
- চোখের সামনে সূর্য ডুবে গেলে রোযা ভঙ্গ করা তথা ইফতার করার নিয়ম । সূর্য ডুবার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ইফতার করা অর্থাৎ কল্যাণে থাকা। [ মুত্তাফাকুন আলাইহ ] ডাগর খেজুর দ্বারা ইফতারি করা সুন্নাহ, তবে এর অবর্তমানে সাধারণ খেজুর দ্বারা আর তাও না থাকলে পানি দ্বারা ইফতার করার সুযোগ রয়েছে । [ আবু দাউদ তিরমিযী]
- স্ত্রী সহবাস, হারাম সহবাস, হস্তমৈথুন, জাগ্রতবস্থায় যৌন চাহিদার সাথে বীর্যপাত, ইচ্ছাকৃত পানাহার, পানাহারের স্থানে স্লাইন-ইঞ্জেকশন গ্রহণ, ইচ্ছাকৃত বমি করা, স্ব ইচ্ছায় অধিক রক্তদান এসব কারণে সিয়াম ভেঙ্গে যায়। [ মুলাখখাস আল ফিকহি ১৮২-৮৩] স্বপ্ন দোষ, অনিচ্ছা ও ভুলে পানাহার, অনিচ্ছায় বমি করা, অনিচ্ছায় রক্তক্ষরণ এবং সামান্য রক্তদানে সাউম নষ্ট হয় না।
- যার উপর সাউম জরুরি কিন্তু সে মুসাফির কিংবা অসুস্থ তাহলে তার জন্য সেই দিনগুলিতে রোযা ছাড়া বৈধ সে অন্য দিনে তা কাযা-পূরণ করে দিবে। [ বাকারাহ ১৮৪] মুসাফিরের সফরে যদি কষ্ট না হয় আর অসুস্থ ব্যক্তির অসুখ যদি হাল্কা হয় তাহলে তারা রোযা রাখবে কিন্তু সফর বা অসুস্থের কারণে রোযা রাখতে একটু কষ্ট হলেই রোযা কাযা করা ভাল। আর বেশী কষ্ট হলে রোযা কাজা করা জরুরি। [শারহুল মুমতি, ইবনু উসাইমীন ]
- রোযা পালনের সময় মহিলাদের মাসিক স্রাব শুরু হলে রোযা ছেড়ে দিবে, শেষ হলে আবার করবে এবং ছুটে যাওয়া রোযাগুলি রামাদান পরে ক্বাযা করবে কিন্তু নামাজ ক্বাযা করবে না । [বুখারি মুসলিম]
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণী মহিলারা অসুস্থ ব্যক্তির মত। রোযা রাখলে যদি স্বয়ং তাদের সমস্যা হয় কিংবা তাদের সন্তানের ক্ষতি হয় তাহলে তারা পরে রোযা ক্বাযা করে দিবে। [শারহুল মুমতি]
- অধিক বার্ধক্য কিংবা চিরস্থায়ী অসুখ যা থেকে সুস্থতার আশা করা যায়না এমন অপারগতার কারণে সাউম পালনে অক্ষম ব্যক্তিরা প্রতি রোযার বদলে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। [ফাতাওয়া ইবনু বাজ ৫/২৩৩] [ অর্ধ স্বা অর্থাৎ (সোয়া কেজি) কাঁচা বা রান্নাকৃত খাবার বা একজন মিসকিন যে পরিমাণ খায় ততখানি খাবার। ]
- সিয়াম পালনকারীদের উচিৎ হবে তারা যেন অবশ্যই ফরয কাজগুলি সঠিক সময়ে পালন করে এবং নফল ইবাদত বেশী বেশী করে। কুরআন তিলাওয়াত, যিকর – আযকার, দান- সাদাকা, দাওয়াত তাবলীগে অগ্রগামী হয়। হারাম কাজ বর্জন করে। গিবত-পরনিন্দা পরিহার করে। আনাস ( রাযীঃ ) হতে বর্ণিত, যে পরনিন্দা করতে থাকে সে সাউম পালন করে না। [ ইবনু আবি শাইবা ৮৮৯০]
বি: দ্র: বর্তমান মহামারীর কারণে বিশ্বের বরেণ্য উলামাগণ কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রায় ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে এই সময় জুমআ, জামাআত এবং তারাবীহ এর নামায বাড়িতে আদায় করা বৈধ বরং জরুরি। নিজের, অপরের, দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে আমাদের এই সময় বাড়িতে নামায আদায় করে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া উচিৎ। ইনশা আল্লাহ্ আপনি আপনার সৎ নিয়তের কারণে জামাআতে সালাত আদায় করার সাওয়াব পেয়ে যাবেন।
অবশ্য যেখানে এই সমস্যা নেই বা অতি লঘু সমস্যা রয়েছে সেখানে আলেম উলামাদের পরামর্শ হিসাবে কাজ করতে হবে।
দুআর আশাবাদী, আব্দুর রাকীব বুখারী-মাদানী।
প্রাক্তন দাঈ, সৌদী আরব
প্রভাষক, জামেয়াতুল ইমাম আলবুখারী, কিশনগঞ্জ।
Md Shamsul Alam says:
যাযাকাল্লাহু খায়র।