যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশক
Posted at July 24, 2020 4:26 pm by Abdur Rakib Madani
| Posted In
Islam
যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকে আপনি কী কী ইবাদত করবেন?
আল হামদুলিল্লাহ,ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবাদ:
সম্মানিত ভাই সকল! আমাদের মাঝে একটি এমন দশক উপস্থিত হয়েছে বা হতে চলেছে, যা পৃথিবীর মধ্যে সব চাইতে উত্তম দশক। প্রিয় নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“অবশ্যই পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন সমূহের মধ্যে হচ্ছে এই দশক”। [অর্থাৎ যিল হজ্জ মাসের ১ম দশক] [বায্যার, ইবনু হিব্বান, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন]
তিনি স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: এই দশক অপেক্ষা অন্য কোনো দিনে তাঁর নিকট সৎ আমল বেশী পছন্দনীয় নয়। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়? তখন আল্লাহর রাসূল বললেন: জিহাদও নয় কিন্তু যে ব্যক্তি জান-মাল নিয়ে বের হল, আর ফিরে আসলো না”। [বুখারী]
কেন এই দশকের এত ফযীলত? এ মর্মে ইবনু হাজার বলেছেন: যেহেতু এই দশকে বড় বড় মৌলিক ইবাদত সমূহ একত্রিত হয় যেমন, স্বলাত, সিয়াম, হজ্জ, উমরা, কুরবানী প্রভৃতি তাই এই দশকের এত বড় মর্যাদা।
আমরা এই মহৎ দশকে কী কী ইবাদত করতে পারি?
- হজ্জ ও উমরা পালন করা: কারণ এটি ইসলামের পঞ্চম রুকন হজ্জের মাস যা অন্য মাসে ও অন্য সময়ে সম্পাদন করা যায় না। তাই এই দশকে সবচেয়ে ভাল ও উত্তম আমলটি হবে হজ্জ পালন করা। নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “গৃহীত হজ্জের বদলা জান্নাত ছাড়া কিছু না”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ]
- নফল সিয়াম পালন করা: সাধারণত: নফল সিয়াম প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে কিংবা প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারে করা মুস্তাহাব। কিন্তু এই দশকের ফযীলত বেশী থাকায় কুরবানীর দিন ছাড়া সম্পূর্ণ দশকই সিয়াম পালন করা মুসতাহাব। যেমনটি ইমাম নাওয়াভী বলেছেন। বিশেষ করে আরাফার দিনে রোযা রাখা। নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আরাফার দিনের রোযা রাখার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে তা আগত এক বছর এবং বিগত এক বছরের পাপের কাফ্ফারা হবে”। [সহীহ মুসলিম]
- নামায সম্পাদন করা: তাওহীদের পর উত্তম ইবাদত হচ্ছে, স্বলাত সম্পাদন করা। তাই ফরয স্বলাত সমূহ জামাআতের সহিত নিজ নিজ সময়ে পালন করা এমনিতেই ফযীলতের কিন্তু ফযীলতের সময় তা পালন করা আরও বেশী ফযীলতের। অনুরূপ বেশী বেশী নফল স্বলাত আদায় করা নিশ্চয় ভাল আমলের অন্তর্ভুক্ত।
-
তাকবীর, তাহলীল, হামদ ও যিকর পাঠ করা: এই দশকের একটি মৃত প্রায় সুন্নার নাম হচ্ছে, তাকবীর পাঠ করা। আমরা হয়তো ঈদের দিনে তাকবীর পড়ি ও অন্যকে পড়তে শুনি কিন্তু এ আমলগুলি যে এই পুরো দশকেই মুসতাহাব তা হয়তো আমরা অনেকে জানি না তাই আমলও করি না। নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তাই তোমরা এই দশকে বেশী বেশী তাসবীহ, হামদ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং তাকবীর পাঠ করো”। [আহমাদ]
এই দশকে দু’জন সম্মানিত সাহাবী আবু হুরাইরা ও ইবনু উমার (রাযি:) বাজারে যেতেন ও রাস্তায় তাকবীর পড়তেন। আর তা দেখে দেখে অন্যরাও তাকবীর পড়ত।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। এই তাকবীরটি পড়তে পারেন। অন্য শব্দও প্রমাণিত।
- সাদাকা তথা দান খয়রাত করা: নফল সাদাকা যে কোনো সময় করা ভাল কিন্তু ফযীলতের সময় এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এই সময় যখন করোনার কারণে বহু মানুষ ও বহু দ্বীনী প্রতিষ্ঠান বেকারত্বের কবলে। মহান আল্লাহ বলেছেন: (হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যে রুযী দান করেছি, তা থেকে তোমরা দান করো, সে দিন আসার পূর্বে, যেদিন কোনো প্রকার ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।) [বাকারাহ/২৫৪]
এছাড়াও যে সমস্ত কাজকর্ম, কথা ও বিশ্বাস মহান আল্লাহ ভালবাসেন ও পছন্দ করেন সে সব সৎ আমল ইবাদত। এমন সব ধরণের সৎ আমল আপনি করতে পারেন। যেমন, কুরআন পাঠ ও শিক্ষাদান, ইসতিগফার, পিতা-মাতার সেবা, আত্মীয়তা রক্ষা, খাদ্য দান, মানুষের সমস্যার সমাধান, রোগীর যিয়ারত, কুরবানী ক্রয়, ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে সতর্ক করা ইত্যাদি।
আল্লাহ যেন আমাদের সুমতি দেন। আমীন।
দুআর আশাবাদী,
আব্দুর রাকীব বুখারী-মাদানী